নিয়ম নিষ্ঠ হলেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন খেয়াল খুশির মানুষ। মন কে চলতে দিতেন আপন ছন্দের গতিতে।
অদ্ভুত অদ্ভুত সব খেয়াল ছিল তাঁর। তার মধ্যেই একটা বাড়ি বদলের খেয়াল। তাঁর বিচিত্র ভাবনায় বিচিত্র ধরনের বাড়ি তৈরি হতে শান্তিনিকেতনে। কখনও উত্তরায়ন, কখনও দক্ষিণায়ন, কখনও দেহলী কখনও শ্যামলী। এক একটার এক এক রকম আকার আয়তন। আরও আছে। শ্যামলী, মৃন্ময়ী, উদীচী। শ্যামলী বাড়ি মাটির হাঁড়ি দিয়ে তৈরি। এক রাতে প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে ধ্বসে পড়ল বাড়ি। সকলে গিয়ে দেখে ভাঙা হাঁড়ির বাড়ির মধ্যে কবি বসে আছেন।
বাড়ি বদলায়। দৃশ্য বদলায়। সঙ্গে সঙ্গে কবির মনও।
শুধূ কি বাড়ি! অন্দর সজ্জা নিয়েও তাঁর এমন খামখেয়াল ছিল।
একবার মনে হল খুব সাদাসিধে ভাবে থাকবেন। বাহুল্যের লেশমাত্র থাকবে না কোথাও। শোবেন কম্বল শয্যায়। গদি- তোষক বাতিল।
জোড়াসাঁকো বাড়িতে সঙ্গে সঙ্গে ডাক পড়ল দিশি কম্বলওয়ালাদের। দলে দলে আসতে লাগল তারা। কবির ঘর ভরে উঠল মোটা দিশি কম্বলে।
মেঝেয় কম্বল। জানলায় কম্বল। সর্বত্র।
দিন কয়েক পর থেকেই গায়ে চুলকানি। ছারপোকার অত্যাচারে কবির প্রাণ ওষ্ঠাগত।
শেষ পর্যন্ত বাড়ির ভৃত্যরা রোজ প্রায় খান তিরিশ কম্বল রোদে দিতে লাগল। শেষে দেখা গেল কম্বলের রোয়াই আসলে ছারপোকার খোঁচা।
আর একবার মশার উৎপাত। ঘরের সব দরজা জানালা বন্ধ করে মশানাশক দেওয়া তো হলই সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজেও বাদ পড়লেন না। সোফার ওপর বসে থাকতেন তিনি। পিচকিরিতে মশানাশক ভরে জবজবে করে ভিজিয়ে দেওয়া হত তাঁর জোব্বা।
তবে তাঁর কম্বলের অভ্যাস বদলে যায়নি। আমৃত্যু বজায় ছিল।