স্বয়ং বিধাতার এক অনবদ্য সৃষ্টি ছিলেন বিধায়ক ভট্টাচার্য। তিনি ছিলেন একাধারে সংলাপী নাট্যকার, অভিনেতা, সাংবাদিক, অধ্যাপক। মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে ১৯০৭ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হরিচরণ ভট্টাচার্য এবং মাতার নাম সত্যবতী দেবী। বিধায়ক তাঁর পিতৃদত্ত নাম নয়। তাঁর পিতার দেওয়া নাম হল বগলারঞ্জন। স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নামকরণ করেন বিধায়ক। প্রথম জীবনে যুগান্ত পত্রিকায় চাকরি করতেন তিনি। তাঁর প্রথম লেখা নাটক 'দেহযমুনা'। প্রথম মঞ্চস্থ নাটক 'মেঘমুক্তি' রঙমহলে এবং দ্বিতীয় নাটক 'মাটির ঘর'। এই দুটি নাটক রচনা করে তিনি বাংলা রঙ্গমঞ্চে আলোড়ন তৈরী করে দিয়েছিলেন।
তাঁর রচিত 'মধুময় সংলাপে'র জন্য তাঁকে মধুসংলাপী আখ্যায় ভূষিত করা হয়। তার রচিত নাটক গুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ নাটকটি হল 'বিশ বছর আগে'। এই নাটকের দ্বারাই তিনি সফলতা লাভ করেন বাংলা রঙ্গমঞ্চে। এই নাটকটির মাধ্যমেই বাংলা মঞ্চে প্রথম শুরু হয় ফ্ল্যাশব্যাক প্রথা। আর সাথে সাথে এই নাটক থেকেই তিনি বাংলা থিয়েটারে শুরু করলেন একবার বিরতির প্রথাও। এরপরে তাঁর রচিত 'খবর বলছি' নাটকে তিনি প্রথম অফ স্টেজে মাইক্রোফোনের ব্যবহার চালু করেন। তাঁর রচিত উল্লেখ্যযোগ্য নাটক গুলি হল মালা রায়, তাইতো, তেরোশো পঞ্চাশ, অন্ধ দেবতা, সেই তিমিরে, অতএব, তোমার পতাকা, তুমি আর আমি, লগ্ন, নটী বিনোদিনী, উজান যাত্রা, খেলা, তাহার নামটি রঞ্জনা, সরীসৃপ, কান্না, সেতু। তিরিশ দশকের মাঝামাঝি থেকে সত্তর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাঁর সময়কাল ছিল বাংলা নাট্য মঞ্চে। এছাড়া ও তিনি সিনেমা, ছোট গল্পের, চিত্রনাট্যের ও সংলাপ লিখেছেন। 'খবর বলছি' তে তিনি অসাধারন অভিনয় ও করেছেন। এছাড়া তাঁর দুটি নাটক ক্ষুধা ও অ্যান্টানি কবিয়াল টানা চলার ক্ষেত্রে দুটি এশিয়ান রেকর্ড ও করেছিল। তিনি নজরুল গীতির গায়ক হিসাবেও পরিচিতি লাভ করেন। তিনি তাঁর নাট্য জীবনে বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত হন। এ হেন শিল্পীর জীবনে আরেকটি শখ ছিল রাজকীয় বাজার করা। পরবর্তী কালে তিনি বৃদ্ধ ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। কর্মহীন জীবন হ্রাস করতে থাকে তাকে। ডিমেনশিয়া জাতীয় ভুলে যাওয়ার রোগ তাকে আঁকড়ে ধরে। এবং ১৯৮৬ সালে ১৫ই নভেম্বর অর্থাৎ গুরুনানকের জন্মদিনের দিন তিনি পরলোক গমন করেন।