বাঙালির ভোজন রসনার কথা কিন্তু গোটা বিশ্বে সমাদৃত ও জ্ঞাত। আর সেই রসনার সমাপ্তি ঘটে শেষ পাতে মিষ্টি দিয়ে। তার কত না ধরণ , কতই না রকম- সে বলে শেষ হওয়ার নয়। আর তা যদি রাবড়ি হয় তাহলে ষোলো কলা পূর্ণ। ঘন দুধের মোটা সরের আস্তরণ জুড়ে তৈরী হয় রাবড়ি। তার প্রতি আকর্ষণ নেই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। যাই হোক প্রায় কম বেশি সব দোকানেই এই রাবড়ির দেখা মেলে। বাঙালি স্বাস্থ্য সচেতন হলেও এর প্রতি ভালোবাসার ঘাটতি কিন্তু এতটুকু হবে না। কিন্তু এই রাবড়ির প্রতি ভালোবাসা যে দুটো গ্রামের নাম বদলে দিতে পারে এমন শুনেছেন না দেখেছেন! না তো- তাহলে আজ সেই সন্ধান দেব।
কলকাতা থেকে ১৫০ কিলোমিটার এবং হুগলী জেলা সদর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুটি প্রত্যন্ত গ্রাম গাঙপুর ও আইয়া ‘রাবড়ি’ গ্রাম নামেই পরিচিত। গাঙপুর জঙ্গি পাড়া ব্লকের অন্তর্গত এবং চণ্ডীতলা ১ নম্বর আইয়া গ্রাম। দুটি ভিন্ন ব্লকে অবস্থিত হলেও গ্রাম দুটির পরিচয় অভিন্ন। দুটি গ্রামের অর্থনীতি কিন্তু এই রাবড়ি নির্ভর, যদিও পাশাপাশি চাষাবাদ চলে। এখানে প্রায় ৫০-৬০ টি বাড়িতে প্রস্তুত করা হয় রাবড়ি।
রুটিন মাফিক প্রতিদিন সকালে পাশের লক্ষ্মনপুর গ্রাম থেকে বাড়ি প্রতি ৬০ -৭০ লিটার খাঁটি গরুর দুধ আসে। আর তারপর শুরু হয় এর প্রস্তুতি। বড় মাটির উনুনে, কড়াইয়ে সেই দুধ জাল দেওয়া হয়। সাথে চলে পাখার বাতাস। আর তাতেই মোটা সরের আস্তরণ পড়তে থাকে। আর সেই সর লোহার শিক দিয়ে কেটে কেটে কড়াইয়ের গায়ে লাগিয়ে রাখা হয়, মোটা হলে তা কেটে ঠান্ডা করতে পাত্রে রাখা হয়। তারপর তাকে চিনি মেশানো ঘন দুধে অবগাহন করিয়ে মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় রাখা হয়। এবার এই পুরো বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে কলকাতা,হাওড়া,দুই ২৪পরগনার মিষ্টির দোকানে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়।
দিনে দিনে সেই স্বাদ আরো অতুলনীয় হয়ে উঠছে। আর একনিষ্ট ভাবে সেই রাবড়ির যোগান দিয়ে চলেছে এই দুই রাবড়ি গ্রাম -গাংপাড় ও আইয়া। স্বাদের দিক থেকে এখানকার রাবড়ি এখনো শীর্ষে। ফলে এই গ্রাম দুটির আসল নাম আছে শুধু খাতায় কলমে, আর অস্তিত্ব বজায় রয়েছে রাবড়ি গ্রাম নামেই। এতক্ষন তো বর্ণনায় স্বাদ নিলেন, তবে এই পুরো বিষয়ের স্বাদ, ঘ্রান নিতে ঘুরে আসতেই পারেন কলকাতার অনতিদূরে এই গ্রাম- হতাশ হবেন না, বরং খোদ হাতে গরম রাবড়ির স্বাদ চাক্ষুষ করে তৃপ্ত হবেন।