রাস উৎসব উপলক্ষ্যে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কয়েকটি প্রিয় পদের রেসিপি

রাস উৎসব আসন্ন। সেই উপলক্ষেই শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কয়েকটি প্রিয় পদের রেসিপি রইল আজকের নিবন্ধে।

 

পুষ্পান্ন

ras- fd1

কী কী লাগবে

গোবিন্দভোগ চাল- ২ কাপ

নুন- স্বাদমতো

হলুদ- ১/২ চা চামচ

আদার রস- ২ চা চামচ

স্পেশাল মশলা- ২ চা চামচ

ঘি- ১/২ কাপ

কাজুবাদাম- ২ টেবিল চামচ

কিশমিশ- ২ টেবিলচামচ

তেজপাতা- ২ টি

চিনি- ৪ চামচ

লবঙ্গ- ৭টি

ছানা- ১৫০ গ্রাম

সাদা তেল- প্রয়োজনমতো

মশলার জন্য প্রয়োজন পড়বে…

লবঙ্গ- ৮টি

দারচিনি- ২টি

জায়ফল- ১/৪

জয়িত্রী- ১টি ফুল

সাদা গোলমরিচ- ২০টি

 

কীভাবে রাঁধবেন

 

চাল ধুয়ে কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর তৈরি করে ফেলুন মশলা। শুকনো কড়াইয়ে লবঙ্গ, দারচিনি, জায়ফল, জয়িত্রী, সাদা গোলমরিচ (না থাকলে কালো গোলমরিচও চলবে) দিয়ে হালকা করে ভেজে নিন।এবার মশলা মিহি করে গুঁড়ো করে নিন।

হাতের তালু দিয়ে ছানা ডলে ডলে মাখুন। সামান্য নুন ও চিনি দিয়ে নিতে পারেন এতে। একেবারে মিহি হয়ে গেলে ছানা দিয়ে ছোটো ছোটো গোল্লা পাকিয়ে নিন।

সাদা ডুবো তেলে ছানার বল লাল করে ভেজে তুলে রাখুন।কড়াই ঘি গরম করুন। তাতে কাজু এবং কিশমিশ সোনালি করে ভেজে নিন।

চালের জল খুব ভালো করে ঝরিয়ে নিন। চালের মধ্যে তিন চার চামচ মতো ঘি, সামান্য হলুদ গুঁড়ো, আদার রস, নুন এবং স্পেশাল মশলা দিয়ে ভালো করে মাখতে থাকুন। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চামচ দিয়ে চাল মাখতে হবে। প্রত্যেকটা চালে যেন মশলা লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বেশ খানিকটা জল গরম করে নিন। মশলা মাখানো চাল মিনিট পনেরো ঢাকা দিয়ে রাখুন। কড়াই গরম করে ঘি দিয়ে তাতে তেজপাতা এবং লবঙ্গ ফোঁড়ন দিন। তাতে মাখা চাল, কাজু, কিশমিশ ভাজা দিয়ে ভালো করে মেশান। তবে চাল খুব বেশি ভাজবেন না। সামান্য মশলা দিয়ে মেশান।

এবার চার কাপ উষ্ণ জল ঢেলে ঢাকা দিয়ে ফুটতে দিন। চাল খানিকটা ফুটে গেলে ঢাকা খুলে চিনি এবং ছানার গোল্লা দিয়ে মিশিয়ে নিনি ভালো করে। তরপর ফের ঢাকা দিয়ে দিন। ভাত একদম ঝরঝরে হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে দিন। গোপালকে পুষ্পান্ন ভোগ দিন উপরে তুলসী পাতা এবং ফুলের পাঁপড়ি ছড়িয়ে।

 

ভোগের খিচুড়ি

ras- fd2

কী কী লাগবে

 

গোবিন্দভোগ চাল- ২৫০ গ্রাম

সোনামুগ ডাল -২৫০ গ্রাম

চন্দ্রমুখী আলু- ১৫০গ্রাম

ফুলকপি-২ টো

টমেটো- ২টো(বড়)

মটরশুঁটি- ১৫০ গ্রাম

কিশমিশ- ৫০ গ্রাম

কাজুবাদাম-৩০ গ্রাম

কাঁচা লঙ্কা- ৫টা

শুকনো লঙ্কা- ফোড়নের জন‌্য

গোটা জিরে- ফোড়নের জন্য

আদা-৫০গ্রাম

হলুদ গুঁড়ো-২ চা চামচ

জিরে গুঁড়ো-২ চা চামচ

ধনে গুঁড়ো-২ চা চামচ

লঙ্কা গুঁড়ো-স্বাদ অনুযায়ী

চিনি- ৩ চা চামচ

সর্ষের তেল- আন্দাজমতো

ঘি-১০০ গ্রাম

গরমমশলা-ছোট এলাচ-৪টে

লবঙ্গ-৪টে

দারচিনি- ৪টে(ছোট)

তেজপাতা- ৩টে

গরমমশলা গুঁড়ো-১ চামচ

 

কীভাবে রাঁধবেন

 

গোবিন্দভোগ চাল ভালোভাবে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে। এক সসপ্যান জল গরম করে রাখতে হবে। আলু ও ফুলকপি ভালোভাবে ধুয়ে কেটে নিতে হবে। আলু একটু ছোট করে কাটতে হবে। ফুলকপি মাঝারি করে কাটতে হবে। ডাঁটার অংশ ছেঁটে দিতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে গরম করে সোনামুগ ডাল শুকনো খোলায় ভেজে রাখতে হবে। ডাল লালচে হয়ে এলে ঢেলে রেখে কড়াই ধুয়ে নিয়ে গ্যাসে বসাতে হবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে আলু ও ফুলকপি হালকা ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ভাজা ডাল ভালোভাবে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে। আদার অর্ধেকের চেয়ে অল্প কম কুচি করে নিতে হবে। বাকি অংশ বেটে নিতে হবে। কিশমিশ বোঁটা ছাড়িয়ে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কাজুবাদাম ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। ভোগের খিচুড়ি ঘি দিয়ে রাঁধলেই ভালো হয়। তবে শারীরিক কারণে বেশি ঘি খাওয়ায় অসুবিধে থাকলে তেল-ঘি মিশিয়ে রান্না করতে হবে। অনেক পরিবারে ভোগের খিচুড়িতে আলু, ফুলকপি ইত্যাদি কোনো তরকারিই দেওয়া হয় না। সে সব পারিবারিক রীতিনীতির বাধ্যবাধকতায় না গিয়েও ভোগের খিচুড়ি রান্না করা যায়। এবার কড়াই পরিষ্কার করে ঘি দিয়ে আবার গ্যাসে বসাতে হবে। ঘি গরম হলে শুকনো লঙ্কা, গরমমশলা থেঁতো, গোটা জিরে আর আদা কুচি ফোড়ন দিতে হবে।  একটু পরে জল ঝরানো গোবিন্দভোগ চাল কড়াইতে দিতে হবে। চাল একটু ভেজে নিয়ে জল ঝরানো ডাল দিয়ে নাড়াচাড়া করে ভেজে রাখা আলুগুলো দিতে হবে। চাল,ডাল,আলু বেশ নেড়েচেড়ে তাতে হলুদ গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, আদাবাটা, টমেটো কুচি ও নুন দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে গরম করে রাখা জল দিতে হবে। জল খুব বেশি দেওয়া যাবে না। কাঁচা লঙ্কা ভেঙে দিয়ে, চিনি, ফুলকপি, কিশমিশ আর কাজুবাদাম দিয়ে মিশিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একটু পরপর ঢাকা তুলে খুন্তি দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দিতে হবে যাতে তলায় লেগে না যায়। জল কমে এলে আবার জল দিতে হবে। কিন্তু একসঙ্গে বেশি জল দেওয়া যাবে না। গোবিন্দভোগ চাল আর সোনামুগ ডাল সেদ্ধ হতে বেশি সময় লাগে না। আলু ছোট করে কেটে ভেজে নিলে তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যাবে। এই খিচুড়ি খুব পাতলা হবে না আবার খুব ঝরঝরেও হবে না। নামানোর সময় ঘি ও গরমমশলাগুঁড়ো ছড়িয়ে ঢেকে রাখলেই তৈরি হয়ে যাবে ভোগের খিচুড়ি।

 

লাবড়া

ras- fd3

কী কী লাগবে

 

আলু-১৫০গ্রাম

বেগুন-২৫০গ্রাম

শিম-২০০গ্রাম

রাঙা  আলু- ২৫০ গ্রাম

মুলো-১৫০ গ্রাম

ফুলকপি-২টো(মাঝারি সাইজের)

কাঁচকলা-৪টে

থোড়-২ টো( মাঝারি মাপের)

পটল-৫০০গ্রাম

মিষ্টি কুমড়ো-৫০০গ্রাম

কাঁঠালের দানা-১৫০গ্রাম

হলুদ গুঁড়ো-২ চা চামচ

জিরে গুঁড়ো-২ চা চামচ

ধনে গুঁড়ো- ৩ চা চামচ

লঙ্কা গুঁড়ো-স্বাদ  অনুযায়ী

আদা- ৩০ গ্রাম

পাঁচফোড়ন-১ চা চামচ

শুকনো লঙ্কা-২টো

তেজপাতা-৩টে

কাঁচালঙ্কা-৬টা

নারকেল- ১ টা( ছোট)

সরষের তেল- আন্দাজমতো

ঘি- আন্দাজমতো

এত রকমের তরকারির মধ্যে ঋতু অনুযায়ী ৫/৬ রকমের তরকারি হলেই লাবড়া রান্না করা যায়। তবে মিষ্টি কুমড়ো, বেগুন এবং মুলো না থাকলে লাবড়ার স্বাদ হয় না।

 

কীভাবে রাঁধবেন

তরকারিগুলো  ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। নারকেল কুরিয়ে রাখতে হবে। সব সবজি মাঝারি আকারে চৌকো করে কেটে নিতে হবে। কাঁচকলা আর থোড় কেটে হলুদ জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। আদা কিছুটা কুচিয়ে নিতে হবে। বাকিটা বেটে রাখতে হবে। কাঁঠালের দানা ভালো ভাবে ধুয়ে অর্ধেক করে কাটতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, আদাকুচি, তেজপাতা ও পাঁচফোড়ন ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়নের গন্ধ বের হলে  সব তরকারিগুলো কড়াইতে  দিতে হবে। নুন দিতে হবে। তরকারিগুলো ভাজা ভাজা হলে বেগুন আর কাঁচকলা তুলে রাখতে হবে। এবার হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো,  জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো , আদাবাটা দিয়ে কষিয়ে, কাঁচালঙ্কা  চিরে দিয়ে অল্প জল দিয়ে ঢাকা দিয়ে রান্না করতে হবে। কিছুক্ষণ বাদে ঢাকা তুলে বেগুন, কাঁচকলা ,নারকেলকোরা ও চিনি দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে গ্যাস কমিয়ে একটু সময় রাখতে হবে। তারপর  আঁচ বাড়িয়ে ঘি ও গরমমশলাগুঁড়ো  ছড়ালেই তৈরি হয়ে যাবে লাবড়া।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...