করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ এই আগুনে শব্দে জেগে উঠেছিল গোটা দেশ। গোটা ভারত। ব্রিটিশদের ভারতছাড়া করার ডাক দিয়েছিলেন গান্ধীজি। সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিল শত কোটি ভারত সন্তান।
১৯৪২ সন। আগস্টের ৯। এইদিন ভোর থেকেই শুরু হওয়ার কথা ইংরেজদের বিরুদ্ধে ‘ভারত ছাড়ো’ কর্মসূচী। তার আগেই আন্দোলন প্রতিহত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে ব্রিটিশ প্রশাসন। মহাত্মা গান্ধীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পুনে। এরপর কারাবন্দী হলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ, জে বি কৃপালনী সমেত বহু প্রথম সারির নেতা।
আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে দেশব্যাপী ধর্মঘট, শোভাযাত্রা, মিছিল, মিটিং ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদের ঢেউ আটকাতে বিক্ষোভ কর্মসূচীতে জারি হয় সরকারি নিষেধাজ্ঞা। গান্ধীজীর ‘হরিজন’ পত্রিকার ওপরও জারি হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা।
ব্রিটিশের এহেন দমন-পীড়ন নীতি আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছিল। আন্দোলন আরও হিংসাত্মক রূপ নেয়। রেললাইন ধ্বংস, স্কুল-কলেজ বর্জন, বিভিন্ন অফিস-আদালতে অগ্নি-সংযোগ, ট্রেন ও টেলিফোন সংযোগ বিছিন্নকরণ থানা, ডাকঘর, রেজিস্ট্রি অফিস, রেলস্টেশন দখল চলতে থাকে দেশের নানা জায়গায়। সাধারণ মানুষের স্বতস্ফুর্ত প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল গোটা ভারত। সবার কণ্ঠে একটাই স্লোগান ইংরেজ ভারত ছাড়ো।
মেদিনীপুর জেলায় ভারত ছাড়ো আন্দোলন এক গণবিদ্রোহের চেহারা নেয়। তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় ব্যাপকতা ছিল বেশি। প্রতিবাদ মিছিলে গুলি চালায় ইংরেজ পুলিশ। শহিদ হন মাতঙ্গিনী হাজরা।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ব্রিটিশ বিরোধীতায় যেভাবে এক হয়েছিল দেশবাসী তার জোরই ব্রিটিশ রাজশক্তির পতন ঘটেছিল ১৯৪৭-এর আগস্টে।