দক্ষিণ এশিয়ার পপ-কুইন নাজিয়া

এশিয়া তাঁকে চিনেছিল ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ দিয়ে। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই জয় করে ফেলেছিলেন পুরো উপ মহাদেশে। কী এদেশ, কী নিজের ভূমি পাকিস্তান দু’দেশেই সীমানা অবান্তর হয়ে গিয়েছিল তাঁর কাছে। দক্ষিণ এশিয়ার পপ-কুইন নাজিয়া। নাজিয়া হাসান।
বড় হয়ে ওঠা লন্ডনে। বাবা বসির হাসান। পেশায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মা, মুনিজা বসির সমাজকর্মী।

ভাই জোহেব এবং জারার সঙ্গে নাজিরার শৈশব। আর পাঁচটা মুসলিম পরিবারে মেয়েরা যেভাবে বেড়ে ওঠে তার চেয়ে কিছুটা অন্যরকম ছিল তাঁর বড় হয়ে ওঠা।

Nazia1

পড়াশোনা আর গান এই নিয়ে জগৎ। লন্ডনের রিচমন্ড রিচমন্ড আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ইকোনমিক্সে স্নাতক হন নাজিয়া।

খুব ছোৎবেলা থেকে পাক তিভিতে শিশুশিল্পী হিসেবে নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন। পুরোপুরো স্টেজ পারফরম্যান্সের শুরু ১৫ বছর বয়সে।

১৯৮১ সালে রিলিজ নাজিয়ার প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘ডিস্কো দিওয়ানে’। ভারত ও পাকিস্তানে বিক্রির সব রেকর্ড ভেঙেচুরে দেয় এই অ্যালবাম। এমনকি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, লাতিন আমেরিকা এবং রাশিয়াতেও বিক্রির তালিকার সবার উপরে ছিল ‘ডিস্কো দিওয়ানে’।
একেবারে অন্যরকম গলা। অন্যরকম গায়কী। ছকভাঙা। খানিকটা হাস্কি। গানের সঙ্গে পুরো ‘প্রেজেন্টেশন’টাই দেখার।

নাজিয়ার দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘স্টার/বুম বুম’ মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে। সেই গান ছবিতেও ব্যভার করা হয় টাইটেল টড়্যাক হিসেবে। ছবির নাম ‘স্টার’। ছবি ফ্লপ হলেও হিৎ নাজিরা।

Nazia2

‘আপ জ্যায়সা কোই’ গানে কেঁপে উঠল গোটা ভারত। সুরকার বিড্ডু আপ্পাইয়াহ। লন্ডনবাসী ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিড্ডুর সঙ্গে নাজিয়ার জুটি সেই সময়ের সুপারহিট।

ভারতীয় বিনোদন দুনিয়ায় নাজিয়া ছিলেন প্রথম প্লেব্যাক শিল্পী, যিনি মিউজিক অ্যালবাম করেছিলেন।
পক্ষীরাজ গতিতে গানের জগত জয় করেছিলেন নাজিরা। তৃতীয় ও চতুর্থ অ্যালবামেও অব্যাহত ছিল সেই গতি।
জুটি বাঁধেন ভাই জোহেবের সঙ্গে। অনেক টিভি শোয়ে দেখা যায় তাঁদের দুজনকে।

নাজিরার পঞ্চম অ্যালবাম ‘ক্যামেরা ক্যামেরা’। সেটাই শেষ। তাঁর শ্রোতাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন আর গাইবেন না তিনি।
মঞ্চ থেকে বিদায় নেন। ব্যক্তিগত জীবনকে বেশি সময় দিতে চেয়েছিলেন। তাই লাইমলাইটে থাকতে থাকতেই বিদায় নেওয়া।
কিন্তু জীবন তাঁর জন্য অন্যরকম চিত্রনাট্য সাজিয়ে রেখেছিল।

Nazia3

১৯৯৫ তে বিয়ে করলেন পাক ব্যবসায়ী মির্জা ইশতিয়াক বেগের সঙ্গে। মোহম্যী সুন্দরী নবপরিনীতা নাজিয়ার থেকে চোখ সরাতে পারেনি তাঁর ফ্যানরা। কে বলবে কিছুদিন আগেই মারণ রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে!

একদিকে ক্যান্সার, অন্যদিকে অসুখী দাম্পত্য নাজিয়া যেন অন্য নাজিয়া। কোথাও গেল মঞ্চের আলো, কোথায় গেল দর্শক-শ্রোতাদের পাগল করা ভালবাসা, জীবনের পথ তখন বড় বন্ধুর। বিষাদ মাখা। বিস্বাদ। কাঁকরে কাঁকরে ক্ষত বিক্ষত হঅ্যা আছে কিন্তু কষ্টের আগল ভাঙার উপায় নেই।

এরই মধ্যেই এক পুত্রের জননী হলেন। সেখান থেকেই যেন অন্য ভাবনার শুরু। আর চুপ থাকলেন না নাজিয়া। মুক্তি চাইলেন স্বামী মির্জা ইশতিয়াক বেগের থেকে। চেয়েছিলেন ছেলেকে নিজের মত মানুষ করতে।

কাঙ্খিত মুক্তি পেলেন। কিন্তু শেষ রক্ষে হল না। লড়াই করতে করতে বুঝতে পারেনননি কখন তেল ফুরিয়ে এসেছে বাতির।
বিবাহ বিচ্ছেদের ঠিক দশ দিনের মাথায় চিরমুক্তি পেলেন এশিয়ার প্রথম পপ কুইন। লন্ডনের এক হাসপাতালে শান্তির ঘুমে। শিয়রে তখন মা মুনিজা বসির

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...