‘কোয়ারান্টিন’ বা ‘আইসোলেশন’ শুধু যে করোনা ভাইরাসের কারণেই বিশ্ববাসীর জীবন অবরুদ্ধ করেছে এমন নয়।এই কোয়ারান্টিন বা আইসোলেশনের ধারণা আগেও ছিল। এবার এক অজানা তথ্য দেব। তা হলো চাঁদ নিয়ে আমাদের মানে সাধারণ মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই , গল্পের ইতি নেই , এবার সেই চাঁদে প্রথম যারা অভিযাত্রী ছিলেন সেই নীল আর্মস্ট্রং, এডুইন অলড্রিন এবং মাইকেল কলিন্স সেখান থেকে ফিরে ছিলেন এই কোয়ারেন্টাইনে। না না। ... করোনা নিয়ে আসেন নি তারা। তাহলে ! এই মহাকাশচারীদের জন্য এই ব্যবস্থা কেন ?? আজ সেই গল্পই হবে।
সময়টা ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই। দুই মহাকাশচারী এডুইন অলড্রিন এবং মাইকেল কলিন্সকে সঙ্গে নিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন নীল আর্মস্ট্রং। আর ফিরে এলেন ঠিক ৮ দিন পর, ২৪ জুলাই। গোল থালার মতো দেখতে এক জিনিস সেখানে যাওয়া যায়!! বিশ্ববাসী অবাক। কেমন দেখতে তাকে ? যেমন বাইরে থেকে দেখায়.. তেমন? উফফ। সে হাজারো প্রশ্ন। আসলে এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি। কিন্তু কেমন দেখে এলেন তাঁরা ? সবাই আগ্রহী।
কিন্তু সে কথা জানাবার আগেই তিন মহাকাশচারীকে পাঠানো হয় কোয়ারেন্টাইনে। না না….করোনা ভাইরাসের কারণে নয়। চাঁদে পা রাখার জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছিল আর্মস্ট্রংদের। কারণ চাঁদের মাটিতে যদি কোনো সংক্রামক ভাইরাস থাকে ! যদিও চাঁদে কোনো প্রাণের সন্ধান খুঁজে পাওয়া যায় নি। কিন্তু এই মহাকাশচারীরা সাথে করে গবেষণার জন্য কিছু চাঁদের পাথর নিয়ে আসে। সেগুলোর পরীক্ষার জন্য নাসার গবেষকরা কিছু পাথর গুঁড়ো করে মিশিয়ে দিলেন ইঁদুরের খাবারের সঙ্গে। তারপর তাদেরও রেখে দেওয়া হল আইসোলেশনে। অবশেষে দেখা গেল, সেই পাথর থেকে কোনো ক্ষতির সম্ভবনা নেই। অতএব সেই নমুনাগুলি রেখে দেওয়া হল।
কিন্তু চাঁদের পাথরকে ঘিরে বিজ্ঞানী থেকে সাধারণ মানুষের তৈরী হলো কৌতূহল। নাসার পরীক্ষাগারে শুরু হল গবেষণা। কিন্তু সাধারণের চাহিদার নিবৃত্তি ঘটাতেই নাসার গবেষকরা নানা জায়গায় শুরু করলো চাঁদের পাথরের প্রদর্শনী। আর তখনই ঘটতে থাকলো পরিকল্পিত চুরির ঘটনা। ১৯৬৯ সালেই মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে নিউজার্সি, ব্রাজিল এবং কানাডাতে পরপর চুরি গেল চাঁদের পাথর। পরবর্তীকালেও বহুবার এমন চুরির ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগই আর ফিরে পাওয়া যায়নি। নাসার রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ৫১৭টি চাঁদের পাথর চুরি গিয়েছে অথবা হারিয়ে গিয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয় এর মধ্যে অনেক পাথর আবার পরে খুঁজেও পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হল আলাস্কা ট্রান্সপোর্টেশন মিউজিয়ামের ঘটনা । ১৯৭৩ সালে প্রদর্শনী চলাকালীন হঠাৎ আগুন লাগে মিউজিয়ামে। আর তখনই হারিয়ে যায় একটি পাথর। সেই পাথর আবার খুঁজে পাওয়া গেল ২০১০ সালে। দীর্ঘ দুবছর ধরে পরীক্ষার পর প্রমাণ হল । আরকানসাসের বাটলার সেন্টার থেকে ১৯৭৬ সালে চুরি যাওয়া পাথরটি পাওয়া যায় ২০১১ সালে। এমনকি ২০০০ সালের পরেও বহুবার এমন চুরির ঘটনা ঘটেছে। অনেক সময় গবেষণার মধ্যে থেকেও চুরি গিয়েছে চাঁদের পাথর। নিরাপত্তার কারণে নাসা ২০১৫ সাল থেকে সমস্ত ধরনের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করে। সে যাই হোক , কোয়ারান্টিনে যদি তেমন বিখ্যাত মানুষজন থাকতে পারে বিজ্ঞানের স্বার্থে , তাহলে সামগ্রিক ও সামাজিক সুরক্ষা স্বার্থে বিদেশ ফেরত মানুষ, সাধারণ মানুষের থাকতে সমস্যা কোথায়!