মায়ের জন্মদিনেই সারপ্রাইজ গিফট, বিশ্ব জয় করেছিলেন সিন্ধু

'এত লোকের সঙ্গে লড়াই করে
ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।
আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে
বলছি এসে, ‘লড়াই গেছে থেমে’,
তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে
চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে'

মনে পড়ে বিশ্বকবির লেখা বীরপুরুষের লাইনগুলো? এও এক জয়গাথা। তবে পুরুষের নয় এক 'বীরাঙ্গনা'র। কবিতার সঙ্গে অনেকটাই মেলে শাটলারের বিশ্ব জয়ের গল্প। মা ভাবছে মেয়েটা বুঝি এবার হেরেই গেল। না, বিশ্ব জয় করে এসেছিল মেয়ে। 'রাঙা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে' জন্মদিনের সেরা উপহারটা দিয়েছিল মা'কে। তিনি ভারতের সোনার মেয়ে। বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে সিন্ধু সভ্যতার 'রচয়িতা' তিনি। তিনি পিভি সিন্ধু।
নিজের কেরিয়ারের সোনালি মুহূর্ত মা'কে উপহার দিয়েছিলেন ভারতীয় শাটলার। কীভাবে? মায়ের জন্মদিনেই যে তিনি জিতেছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ।

pvsindhu1

সুইজ্যারল্যান্ডের বাসেলে তিনি যখন চ্যাম্পিয়ন হলেন তখন
হায়দরাবাদে তাঁর বাড়িতে উৎসব‌। তাও জোড়া। একে তো মেয়ে তাদের বিশ্বজয়ী। আবার রত্নগর্ভা বিজয়ার জন্মদিনও ছিল ওই দিনেই। দিনটা ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট। বাসেলের রবিবাসরীয় ফাইনাল এক পেশে জেতেন সিন্ধু। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে স্থাপিত হয় সিন্ধু সভ্যতা। ফাইনালে হয়েছিল মাত্র ৩৮ মিনিটের। প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নাজোমি ওকুহারাকে পুসরেলা সিন্ধু স্ট্রেট সেটে হারিয়ে দিয়েছিলেন।

না কোর্টে আছড়ে পড়েনি জাপানি বোমা। সিন্ধু গর্জনে তা আছড়ে পড়বার আগে অতি সহজেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল।
ওকাহুরা কার্যত আত্মসমর্পণ করেছিলেন সিন্ধুর কাছে। ভারতীয় শাটলার ম্যাচ জেতেন ২১-৭, ২১-৭ ফলাফলে।
ঐতিহাসিক জয়ের পর শূন্যে ভাসছে তাঁর পা। ভুলে যাননি, মায়ের জন্মদিনটা। বলেছিলেন তিনি বলেন, 'আজ আমার মা-র জন্মদিন। ভাবছিলাম মাকে কী উপহার দেব। অবশেষে এই সোনাই তাঁকে উপহার দিলাম।’

সোনার দৌড় শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। ওই বছর ও ২০১৪ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতেন সিন্ধু। ক্রমন্নতি করেন সিন্ধু। ২০১৭, ২০১৮ সাল। এবার রুপো। ২০১৯ সাল সোনা জিতে নেন সিন্ধু। সঙ্গে গড়েন ইতিহাসও। প্রথম ভারতীয় হিসেবে ব্যাডমিন্টনে বিশ্বজয়ী হন হায়দরাবাদী।

pvsindhu2

১৯৯৫ সালের ৫ই জুলাই জন্ম হয় পি ভি রামানা এবং পি বিজয়ার মেয়ে সিন্ধুর। বাবা, মা দুজনেই ভলিবল খেলোয়াড়। বাবা অর্জুন পুরস্কারও পেয়েছেন। এমন পরিবারের মেয়ের ভলিবল কোর্টে পদার্পন হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। লম্বা চেহারাও সেই কথাই বলছে।

২০০১ সাল বদলে যায় সবকিছু। অল ইংল্যান্ড ওপেন ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন হলেন পুল্লেলা গোপীচাঁদ। বদলে যায় সিন্ধুর জীবন। ভলিবলের ছেড়ে হাতে তুলে নেন ব্যাডমিন্টনের কর্ক , ব্যাট। আট বছর বয়সে শুরু হয় শাটলার হিসাবে যাত্রা। প্রথমে সেকেন্দ্রাবাদে মেহবুব আলীর কাছে খেলার প্রারম্ভিক শিক্ষা নেন। পরে স্বপ্নের খেলোয়াড়, অর্থাৎ পুলেলা গোপীচাঁদের ব্যাডমিন্টন একাডেমী যোগদান করেন। তারপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি সিন্ধুকে। জিতেছেন একের পর এক চ্যাম্পিয়নশিপ। অলিম্পিকে রূপো এবং শেষে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...