বয়স তিনের কোঠায়। এখনও প্রাক-প্রাথমিকেই পা রাখেনি সে। তাতে কি! এই বয়সেই সে পুরুলিয়া জেলার ‘বিস্ময় বালক’ হয়ে উঠেছে। নাম অমরজ্যোতি মাহাতো। তার প্রতিভা দেখলে তাকে চলমান ‘বিশ্বকোষ’ বললেও ভুল হবে না। সাধারণ জ্ঞানের কতো কিছুই ঠোঁটস্থ পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডি ব্লকের প্রত্যন্ত ধনুডি গ্রামের এই ‘বিস্ময় বালক’-এর। বিশ্বের ১৯৬ টি দেশের রাজধানির নাম, স্থানীয় প্রধান থেকে শুরু করে জেলার সমস্ত আধিকারিকের নাম তার মুখুস্থ। যাকে বলে এককথায় চলমান ‘এনসাইক্লোপিডিয়া’। তার প্রতিভায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেছে বাঘমুন্ডিতে। তার প্রতিভার কথা লোকমুখে প্রচারিত হওয়ার পর কতো মানুষ অমরজ্যোতির সাক্ষাৎ পেতে, তাকে একবারের জন্য চোখের দেখা দেখতে ছুটে আসছেন।
অমরজ্যোতির বাবা ক্ষিতিশ মাহাতো পেশায় একজন গ্রামীণ চিকিৎসক। সঙ্গে চাষাবাদও রয়েছে। ক্ষিতিশবাবুর ছোট ছেলে অমরজ্যোতি। এত ছোট বয়সে এই প্রতিভার কারণে গোটা গ্রাম তার প্রশ্নংসায় পঞ্চমুখ। অমরজ্যোতি ধনুডি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যায়, কিন্তু অধিকাংশ দিনই খুচুড়ি নিয়েই ফিরে আসে। আর নিয়ম করে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাবার কাছে বসে শুনে শুনেই জানা এবং চেনার চেষ্টা করে গোটা বিশ্বকে। অবলিলায় জেনেও গেছে সে অনেক কিছুই। তাই তো অমরজ্যোতিকে প্রশ্ন করেই, জানতে পারবেন ভারতের প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম, রাজধানী, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নাম, স্থানীয় বিধায়ক, এমপির নাম থেকে শুরু করে বিডিও, ওসি, কৃষি আধিকারিক, ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক, জেলাশাসক, পুলিস সুপার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রীদের নাম, রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের নাম আরও কতো কি। আরও আছে বাকি। এই খুদে গড়গড় করে বলতে পারে লোকসভা, রাজ্যসভা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্যসংখ্যা। তবে সবটাই নির্ভর করে তার মুডের উপর। হবে নাই বা কেন! এমন প্রতিভার মুড তো থাকবেই। তবে এই মুড আবার সহজেই বদলে যেতে পারে, যদি ছোট্ট হাতে মাঝে মাঝেই চলে আসে চকোলেট।
এই চকোলেট হাতে নিয়েই কখন বাবার কাঁধে চড়ে, কখনও আবার খাটিয়ায় বসে বলতে শুরু করে একের পর এক তথ্য। এর পুরোটা না হলেও অর্ধেক কৃতিত্ব অবশ্যই অমরজ্যোতির বাবা ক্ষিতিশবাবুর। আর পাঁচজন অভিভাবকের মতোই তিনিও আরও ছোট বয়সেই একটু একটু করে ছেলেকে অ-আ-ক-খ ছাড়াও অনেক কিছুই শেখাতে শুরু করেন। তখনি তিনি বুঝতে পারেন ছেলের এই অসাধারণ প্রতিভা সম্বন্ধে। তিনি বুঝতে পারেন যে, তার ছেলের মনে রাখার ক্ষমতা অন্য শিশুদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তাই আর দেরি করেননি, ছোট থেকেই অমরজ্যোতির প্রতিভায় শান দিতে থাকেন ক্ষিতিশবাবু। তার ফল আজ ক্ষিতিশবাবু তো বটেই গোটা পুরুলিয়া জেলা দেখছে। শুধু পুরুলিয়া কেন গোটা পশ্চিমবঙ্গ দেখছে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার সন্ধে নাগাদ ওই ‘বিস্ময় শিশু’-র প্রতিভার নমুনা নিয়ে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন বাঘমুন্ডির সন্দীপ মাহাতো। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, কেউ একজন তাকে একের পর এক সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন করছেন। আর অমরজ্যোতি হাসতে হাসতে তার উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতির রাজধানী অবলীলায় বলে ফেলায় তার পাশে থাকা যুবক তাকে কোলে নিয়ে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছেন। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একদিনের মধ্যে ওই ভিডিও-র ভিউয়ার্স ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। শেয়ার হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি।
ছোট্ট অমরজ্যোতির এই প্রতিভা ফের একবার মনে করিয়ে দেয় এই জেলারই রেলশহর আদ্রার এর এক প্রতিভা মৌসুমি চক্রবর্তীর কথা। আজ সেদিনের সেই ‘বিস্ময় বালিকা’ নামে পরিচিত হওয়া মৌসুমি শিক্ষিকা। প্রায় দু’দশক আগে এই মৌসুমিই খুব কম বয়সে মাধ্যমিক দিয়ে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন। তিনিও এভাবেই অমরজ্যোতির মত গড়গড় করে বলে দিতে পারতেন সবকিছু। ছোট্ট অমরজ্যোতির এই প্রতিভায় কোন কোন মনোবিদ বলছেন যে, এটা একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। তবে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নয়। আসলে ওই শিশুর বুদ্ধি অন্যদের তুলনায় বেশি। অন্যদের তুলনায় শিশুটির মনে রাখার ক্ষমতাও অধিক।