আষাঢ়ের শুক্ল পক্ষে রথযাত্রার দিন দাদা বলভদ্র আর বোন সুভদ্রাকে নিয়ে পুরীর মন্দির থেকে শ্রী গুন্ডিচা যাত্রা করেন প্রভু জগন্নাথ। শ্রী গুন্ডিচা মন্দির হল জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি।
কিন্তু জগন্নাথের মাসি কে? কেনই বা প্রভু জগন্নাথ আসেন মাসির বাড়ি?
সেই উত্তর পেতে গেলে ফিরতে হবে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের রাজত্বে। ইন্দ্রদ্যুম্নের পত্নী গুন্ডিচার বাড়ি হল প্রভু জগন্নাথের মাসির বাড়ি। সেখানেই তিনি সম্বৎসর বেড়াতে যান। সাতদিন কাটিয়ে ফের ফিরে আসেন নিজ ধামে।
বাগানের মাঝখানে এক সুরম্য মন্দির। চারদিক পরিখা দিয়ে ঢাকা। মাসির বাড়ি থেকে প্রভু জগন্নাথের শ্রী মন্দিরের দূরত্ব তিন কিলোমিটার।
শ্রীধাম এবং গুন্ডিচা মন্দির পুরীর মূল রাজপথের দুই প্রান্তে অবস্থিত। এই পথ দিয়ে যাত্রা করে শ্রীজগন্নাথদেবের রথ। এই পথ বড় দন্ড নামে পরিচিত। প্রথম দিনে মূর্তি তিনটি রথেই থাকে এবং রথযাত্রার দ্বিতীয় দিন প্রথা মতো তাদের গুণ্ডিচা মন্দিরে প্রবেশ করানো হয়৷ তারাা প্রবেশের পর থেকে আগামী সাতদিন যাবৎ গুণ্ডিচা মন্দিরেই অবস্থান করেন৷
গুন্দিচা মন্দির বেলে পাথর দিয়ে তৈরী। কলিঙ্গ স্থাপত্য রীতিতে তৈরী। দেউলযুক্ত এবং চারটি খন্ডে বিভক্ত। চার খন্ডের আলাদা আলাদা নামও আছে। ‘বিমান’ যা মন্দিরের মূল অংশ এবং গর্ভগৃহকে ধারণ করে থাকে। সেখানেই থাকে পবিত্রমূর্তি। সমাবেশ দালানের নাম জগমোহন। উৎসব মঞ্চটি ‘নাটমণ্ডপ’ নামে পরিচিত। এছাড়া দেবতাকে ভোগ উৎসবের স্থানটিকে বলা হয় ভোগমন্ডপ। মন্দির সংলগ্ন বাগানটিকে বলা হয় অপগম।
মন্দিরটির গর্ভগৃহের মঞ্চটি সমতল এবং তল থেকে ৪ ফুট উঁচুতে অবস্থিত৷ ১৯ ফুট দীর্ঘ ক্লোরাইড গ্রুপ ও ফাইলোসিলিকেট খনিজ নির্মিত রত্নবেদীর ওপর বার্ষিক অনুষ্ঠানের সময় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি স্থাপন করা হয়।
শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে গুণ্ডিচা মন্দিরে রথযাত্রা উপলক্ষ্যে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানের নাম হেরা পঞ্চমী। বহু মানুষ গুন্ডিচা মন্দিরে সমবেত হন এই উৎসব উপলক্ষে।
আষাঢ় মাসের রথযাত্রার সাতদিন যাবৎ এই গুণ্ডিচা মন্দিরেই জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রার আরাধনা করা হয়৷ এই মন্দিরে শ্রী লক্ষ্মী দেবীর অধিষ্ঠান। রথযাত্রা থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত নানা উৎসব চলে গুন্ডিচায়।