কিছু মানুষ যেমন নিষ্ঠার সঙ্গে ট্রাফিক আইন মেনে চলেন, তেমনই কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা দায়িত্ব নিয়ে তা ভেঙেও ফেলেন। নগরের রাস্তা ঘাটে এমন দৃশ্য আকছার চোখে পড়ে। এ অবস্থায় বেলাগাম ‘রাইডে’ লাগাম টানতে এবং ট্রাফিক আইনের হাল ফেরাতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে পুনে ট্রাফিক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।
সাধারণত, ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তিস্বরূপ নির্দিষ্ট অঙ্কের জরিমানা ধার্য করা হয় অথবা তাঁদের বিরুদ্ধে অন্যান্য দন্ডমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু যাঁরা নিয়মিত ট্রাফিক আইন মেনে চলেন, তাঁদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয় না। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে, যেসব চালকদের ‘ক্লিন ট্র্যাক’ রেকর্ড রয়েছে, গিফট কুপনের মাধ্যমে তাদের পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুনে ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট।
এই উদ্যোগ নেওয়ার একমাসের মধ্যেই প্রায় ১৫,০০০ নাগরিককে ক্লিন ট্র্যাক রেকর্ডের সুবাদে পুরস্কৃত করেছে পুনে ট্রাফিক পুলিশ।
২০১৯ এর মার্চ থেকে, পুনের ডেপুটি কমিশনারের (ট্রাফিক গার্ড) পদে নিযুক্ত রয়েছেন পঙ্কজ দেশমুখ। ভগ্ন ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে তিনিই প্রথম উদ্যোগটি নেন।
“শহরাঞ্চলগুলিতে, ট্রাফিক নিয়ম নিয়ে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। হয় তাঁরা পুলিশদের অপছন্দ করেন অথবা ভয় পান। যদিও আমরা আমাদের কাজ করে চলেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের কড়া নাকাবন্দী থাকা সত্ত্বেও, একটু ফাঁক পেলেই মানুষ আইনভঙ্গ করার চেষ্টা করেন। এটা একটা দৃষ্টিভঙ্গি। অন্যদিকে, আইনমান্যকারী মানুষেরা সঠিক কাজের জন্য কোনও রকম উৎসাহ পান না। অতঃপর এই অভিনব প্রয়াস,” এমনটাই বলছেন পুনের এক আইপিএস অফিসার।
এক মাস আগে, সুইগি, জোমাটোর মতো ফুড ডেলিভারি সংস্থাগুলির সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয় পুনে ট্রাফিক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। আইনমান্যকারীদের ফুড কুপন দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন তাঁরা। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, এতে আইন ভঙ্গের ঘটনাগুলি দ্রুত কমে আসবে।
“প্রস্তাবটির সঙ্গে সম্মত হওয়ার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত তাঁরা জানতেন, এর ফলে অপরিবর্তনীয় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, তাঁরাও পুনেকে ‘ক্লিন সিটি’ হিসেবে দেখতে চান,“ বলছেন দেশমুখ।
সিগন্যাল ভাঙলে অথবা সিট বেল্ট ও হেলমেট না পরলে যেভাবে পুলিশেরা চালকদের দাঁড় করিয়ে ‘চার্জ’ করেন, ঠিক একই কায়দায় দাঁড় করানো হচ্ছে শৃঙ্খলাবদ্ধ চালকদের। গাড়ি দাঁড় করানোর পর পুলিশকর্মী লাইসেন্স ও প্লেট নম্বর নথিভুক্ত করে রাখেন এবং তাঁদের ডাটাবেস খতিয়ে দেখেন। রেকর্ড ঠিকঠাক থাকলে চালকদের কাছে ফোন নম্বর চান। এরপর সেই নম্বরে ১০০ টাকার একটি গিফট কুপন পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে তাঁরা উল্লেখিত দোকানগুলি থেকে সহজেই খাবার সংগ্রহ করতে পারেন। আপনাকে শুধু নির্দিষ্ট দোকানগুলিতে গিয়ে ডিসকাউন্ট কুপনটি দেখাতে হবে।
প্রাথমিক অবস্থায় থাকার দরুন স্কিমটি এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় নি। খুব শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে আরও এগোবেন তাঁরা। আগামী দিনে আপনি নিজেই ট্রাফিক পুলিশের কাছে গিয়ে আপনার ট্র্যাক রেকর্ড খতিয়ে দেখার আর্জি জানাতে পারবেন, ট্র্যাক রেকর্ড পরিস্কার থাকলেই মিলবে ডিসকাউন্ট কুপন।
জানা যাচ্ছে, উদ্যোগটির বৈধতার ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা ধার্য করা হয়নি। প্রক্রিয়াটি সক্রিয় রাখার জন্য এখনও যথাযথ সময় দেওয়া প্রয়োজন, এমনটাই মনে করছে পুনের ট্রাফিক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।
স্কিমটির দ্বারা লাভবান এক ব্যক্তি, যোগেশ জানাচ্ছেন, “দীর্ঘদিন ধরে নিয়ম মেনে গাড়ি চালিয়ে আসছি। হেলমেট ছাড়া গাড়ি চালাই না। পুনে পুলিশ এ ধরণের একটি উদ্যোগ নেওয়াতে আমি খুব খুশি। সম্প্রতি আমি আমার কুপনটি সংগ্রহ করেছি। এটি একটি দারুণ প্রয়াস এবং আমি নিশ্চিত যে এর ফলে ট্রাফিক আইন নিয়ে চালকদের মধ্যে প্রবল প্রভাব পড়বে।“
বিষয়টির ইতিবাচক দিকটি উদ্যোগটিকে আরও উৎসাহব্যঞ্জক করে তুলেছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী দিনে স্কিমটি লাভ করার প্রত্যাশায় বহু চালক শৃঙ্খলা মেনে গাড়ি চালাবেন। পাশাপাশি, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়ম মেনে গাড়ি চালিয়ে আসছেন, তাঁরাও অনেকটা উৎসাহ পাবেন।
যে সব বেপরোয়া চালকেরা এই বলে অজুহাত দেন যে, “যদি সবাই নিয়ম না মেনে চলেন, তাহলে আমরা কেন মানবো?” তাঁদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে ভুল প্রমাণিত করবে এই স্কিম। আর এতে আখেরে লাভ হবে আমাদেরই। যদি রাস্তা ঘাটে একটু সচেতন হয়ে গাড়ি চালানো যায় তাহলে শুধু ট্রাফিক আইন মান্য করাই হবে না, এর ফলে অবধারিত দুর্ঘটনার হাত থেকেও মিলবে পরিত্রাণ।