দুর্গাষ্টমীতে নিরামিষ
দুর্গাপুজোর অষ্টমী তিথিতে ‘বীরাষ্টমী ব্রত’ পালন করার প্রাচীন নিয়মকে স্মরণে রেখেই সরলা দেবী সূত্রপাত করেছিলেন বীরাষ্টমী উৎসবের। সে সব আজ অতীত। যদিও মহাষ্টমী তিথি আজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী’- কে প্রণাম জানিয়ে এই বিশেষ দিনের কিছু বিশেষ পদের রন্ধনপ্রণালী দেওয়া হল।
ছানা ভাপা
কী কী লাগবে
ছানা বা পনির-৫০০গ্রাম
নারকেল- আধমালা
সর্ষের তেল-আন্দাজমতো
চিনি- সামান্য ( না দিলেও চলবে)
হলুদগুঁড়ো-১ চা চামচ
নুন- আন্দাজমতো
স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের মুখবন্ধ টাইট টিফিনকৌটা
কী ভাবে রাঁধবেন
পনির চৌকো চৌকো করে কেটে নিতে হবে। সামান্য নুন ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে সর্ষে মিহি করে বেটে নিতে হবে। কড়াইতে তেল দিয়ে পনির হালকা ভেজে নিতে হবে। টিফিনকৌটায় নারকেলবাটা, সর্ষেবাটা, কিছুটা তেল,চিনি আর নুন মিশিয়ে রাখতে হবে। এবার ভাজা ছানার টুকরোগুলো সাবধানে ওই মশলায় মাখিয়ে এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে ছানার টুকরোগুলোর ওপরেও নারকেল-সর্ষেবাটার মিশ্রণ থাকে। এবার কাঁচালঙ্কাগুলো চিরে নিয়ে ওই পনিরগুলোর ফাঁকে ফাঁকে গুঁজে দিতে হবে। ওপরে কিছুটা সর্ষের তেল ছড়িয়ে দিতে হবে। টিফিনকৌটোর মুখটা শক্ত করে বন্ধ করতে হবে। এই রান্নার ক্ষেত্রে টিফিনকৌটোর মুখ শক্ত কি না তা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কেন না, যদি টিফিনকৌটোর মুখটা আলগা থাকে তবে এই রান্নাটি কোনওমতেই হবে না। তাই ছানা ভাপা করার আগে এটা দেখে নিতে হবে।এবার কড়াই অথবা ডেকচিতে ওই টিফিনকৌটোটা বসিয়ে পাশ থেকে এমন ভাবে জল দিতে হবে যাতে কড়াইয়ের জল ফুটে উঠলেও টিফিনকৌটোতে জল না ঢোকে। এবার গ্যাস জ্বালাতে হবে। টিফিনকৌটোর ওপর ভারী কোনো জিনিষ যেমন শিলনোড়া চাপিয়ে দিতে হবে। জল ফুটে কমে গেলে পাশ দিয়ে সাবধানে খানিকটা জল দিতে হবে। মিনিট পনেরো ভাপে রাখলেই তৈরি হয়ে যাবে ছানা ভাপা। এই রান্নার আরও একটি পদ্ধতি আছে। সেক্ষেত্রে সর্ষেবাটা, নারকেলবাটার সঙ্গে কিছুটা পোস্তবাটাও মেশাতে হবে। ৫০০ গ্রাম পনিরে ৫০-৬০ গ্রাম পোস্তবাটাই যথেষ্ট।
ছানার কালিয়া
কী কী লাগবে
ছানা(ঘরে কাটা)বা পনির-৫০০ গ্রাম
আলু- ১৫০ গ্রাম
হলুদ গুঁড়ো– ১ চা চামচ
জিরে গুঁড়ো-১ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো- ২ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো- স্বাদ অনুযায়ী
আদাবাটা- ২ চা চামচ
গোটা গরমমশলা-২ টো দারচিনি, ২ টো ছোট এলাচ, ২ টো লবঙ্গ
গোটা জিরে-ফোড়নের জন্য
তেজপাতা- ২ টো
শুকনো লঙ্কা-২ টো
ঘি-২ বড় চামচ
চিনি-স্বাদ অনুযায়ী
কাঁচালঙ্কা-২ টো
টমেটো-২টো
সর্ষের তেল-রাঁধবার জন্য
নুন- স্বাদ অনুযায়ী
কী ভাবে রাঁধবেন
ঘরে কাটা ছানা বা কেনা পনির- যে কোন ছানা দিয়েই কালিয়া রাঁধা যায়। যদি পনির বা ছানায় জল থাকে তবে চৌকো টুকরো করে কাটার পর একটা ফুটো ফুটো থালার ওপর রেখে অন্য আয়োজনগুলো করে নিতে হবে। আলু ভাল করে ধুয়ে ছানার চেয়ে একটু বড় চৌকো টুকরো করে কেটে নিতে হবে। ছানার টুকরো থেকে জল ঝরিয়ে নুন মাখিয়ে রাখতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে তাতে তেল দিয়ে গরম করে ছানাগুলো ভেজে নিতে হবে। এরপর আলুগুলো লাল করে ভেজে নিতে হবে।
তেল কমে এলে আবার তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, গোটা জিরে, তেজপাতা ও গোটা গরমমশলা ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়নের গন্ধ বের হলে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, আদাবাটা, চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে তেলে দিতে হবে। একটু নাড়াচাড়া করে টমেটো বাটা দিতে হবে। প্রয়োজনমতো নুন আর মশলা ভালোভাবে মিশিয়ে সামান্য জল দিয়ে ভাজা আলুগুলো দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। মশলার গন্ধ বের হলে আরও খানিকটা জল দিয়ে কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে গ্যাস একটু কমিয়ে ঢাকা দিয়ে আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে পনিরের ভাজা টুকরোগুলো ঝোলে দিয়ে ফোটাতে হবে। ঝোল বেশ গাঢ় হয়ে গেলে গরমমশলাগুঁড়ো ও ঘি দিয়ে নামিয়ে রাখতে হবে।
ছানার পায়েস
কী কী লাগবে
মাখন শুদ্ধু দুধ( ফুল ক্রিম মিল্ক)- ২১/২ লিটার( আড়াই লিটার)
চিনি-স্বাদ অনুযায়ী
ঘি-সামান্য
ছোট এলাচ- ৫/৬ টা
দারচিনি গুঁড়ো- আন্দাজমতো
কাজুবাদাম-আন্দাজমতো
পেস্তা- সামান্য ( কুচি করে নিতে হবে)
আমন্ড- আন্দাজমতো( কুচি করে নিতে হবে)
কিশমিশ-আন্দাজমতো
পাতিলেবু-৩টে
জাফরান-সামান্য( না হলেও চলবে)
পাতলা পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো
কী ভাবে রাঁধবেন
এক লিটার দুধ ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে গ্যাস কমিয়ে দুটো লেবুর রস ধীরে ধীরে মিশিয়ে ছানা কাটতে হবে। যদি দুটো লেবুর রসে ছানা ঠিকমতো কাটা না হয় তবে আর একটা লেবুর রস দিতে হবে। ছানা ভালোভাবে কেটে গেলে ছাঁকনি দিয়ে ছানার জল সম্পূর্ণ ছেঁকে নিতে হবে। তারপর তিন থেকে চার বার খাবার জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ছানা থেকে লেবুর টক ভাব দূর করতে হবে। এরপর পরিষ্কার পাতলা কাপড়ের টুকরোয় ভালো করে নিংড়ে আধঘন্টা মতো ছানা ঝুলিয়ে রাখতে হবে।এই সময় কাজুবাদামগুলো গোটা থাকলে ভেঙে নিতে হবে। কিশমিশের বোঁটা ছাড়িয়ে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।আধঘন্টা পরে ছানা নামিয়ে থালায় ছড়িয়ে হাত দিয়ে ভেঙে রাখতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে সামান্য ঘি দিয়ে গরম করে ভাঙা ছানার টুকরোগুলো দিয়ে হালকা গরম করে নিতে হবে। আর একটা কড়াই গ্যাসে বসিয়ে বাকি দেড় লিটার দুধ ঢেলে ছোট এলাচ ও জাফরান দিয়ে ফোটাতে হবে। দুধ ক্রমাগত নাড়তে হবে। দুধে যেন সর না পড়ে। দুধ কিছুটা গাঢ় হয়ে এলে ছানা ভাঙা, কাজুবাদাম, কিশমিশ দিয়ে নাড়তে হবে। আরও একটু ঘন হলে নিজেদের স্বাদ অনুযায়ী চিনি দিয়ে আবার নাড়তে হবে। চিনি পুরো গলে গেলে, ছানা সহ দুধ ঘন হয়ে এলে দারচিনি গুঁড়ো অথবা জাফরান দিয়ে নামিয়ে রাখতে হবে। ঠান্ডা হলে ওপরে পেস্তাকুচি ও আমন্ডকুচি দিলেই তৈরি হয়ে যাবে দুর্গাষ্টমীর বিশেষ মনমাতানো ছানার পায়েস।