পুজোর জামা বলতে তখন ফুল ছাপ ঘটিহাতা ফ্রক। গ্রাম বা মফস্বলগুলোতে ডেনিম জিন্স, নানান ধরনের ব্লাউজ যেগুলো ফ্যাশনেবল তাদের চল শুরু হয়নি। নব্বই দশকের ফ্যাশনে ঘটিহাতা জামা এবং ব্লাউজের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্তমান সময়ে যদিও আবার সেই ফ্যাশন ফিরে এসেছে, তবুও এই ঘটিহাতা জামার কথা মনে পড়লেই ভেসে ওঠে নব্বই দশকের স্মৃতি।
পুকুর পাড়ে বসে গল্প করছে কয়েকজন মেয়ে। গ্রামের পুকুরধারটা দুপুরবেলা যেন আরো খানিকটা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। পছন্দের রং, পছন্দের জামার ধরন এসবের কথা পুকুরের পাশের বাতাসে ঘূর্ণির মত পাক খায়। যে জামার কথা মেয়েগুলোর চোখে মুখে শরীরের ভাষায় ফুটে ওঠে, তার গায়ে আদুরে বিড়ালের মত লেস লাগানো। হাতাটা ফুলো ফুলো। হাতার নাম ঘটি হাতা। নব্বই দশকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং গ্রহণীয় ফ্যাশন ছিল এই ঘটিহাটা জামা, ফ্রক এবং ব্লাউজ। পরিবারের কাছে সবচেয়ে আদুরে মেয়েটার আবদার ছিল এই ধরনের জামা। দর্জির কাছে তখন এই ডিজাইনের জামা তৈরি করানোর ভিড়। সুতির ফ্রকে ঘটিহাতা আর ফুল ছাপ এই ছিল উৎসবের সাজ।
বেশিরভাগ ফ্যাশনের আবির্ভাব ঠাকুরবাড়ি থেকে। ব্লাউজ পরার চল শুরু হয়েছিল এই ঠাকুরবাড়ির বৌদের সাজগোজ থেকে। অনেক ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ বলেন এই ধরনের ঘটিহাতা বা পাফি স্লিভসের জল ভারতবর্ষে শুরু হয়েছে গুপ্তযুগ থেকে। গুপ্ত যুগের নারীরা এই ধরনের হাতাওলা জামাকাপড় পরতে পছন্দ করতেন। অনেকে আবার এই বিষয়ে বলেন যে, ভারতবর্ষের বাইরের কোন দেশ সম্ভবত রাশিয়া থেকে এই ধরনের জামাকাপড় পরার প্রচলন শুরু হয়। তারপর থেকে বঙ্গে এই পাফি স্লিভস পরার শুরু বলেই মনে করা হয়।
ঐতিহাসিকদের মতে সব পুরনো ফ্যাশন ফিরে আসছে সময়ের স্রোতে। সেভাবেই এই ঘটিহাতা জামা বা পাফি স্লিভস আবার ফ্যাশনের জগতে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।
পুরনো দিনের বিভিন্ন ফ্যাশন ম্যাগাজিন ঘেটে ঐতিহাসিকরা দেখেছেন রাশিয়ায় সর্বপ্রথম এই ঘটিহাতা জামা পরা হয়েছিল। তবে এক্ষেত্রে অনেকে গুপ্ত যুগের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। যদিও পরবর্তীকালে ঠাকুরবাড়ির সাজগোজে এই ঘটিহাতা জামা ব্যবহারের প্রাধান্য পায়। তবে সেখানে যুক্ত হয় নানা ধরনের টুকরো পোশাকের কারুকার্য। যেমন লেস বসানো ঘটিহাতা জামা বা ব্লাউজ।
ফ্যাশন আসলে বহমান স্রোত, এক সময়কাল থেকে আরেক সময় কালে বয়ে যায় নিজের মত। মানুষ ভালোবেসে আদরে তাকে আঁকড়ে রাখে। আর এভাবেই গড়ে ওঠে স্মৃতিকথা।