ক্রীতদাসদের কষ্ট কথার জীবন্ত দলিল। স্বাধীনতা চাঁদে পৌঁছনোর মত। তবুও স্বপ্ন দেখেন তারা।প্রথম বছরেই বইটির প্রায় তিন লক্ষাধিক কপি বিক্রি হয়। বিক্রির সংখ্যা দিয়ে একমাত্র বাইবেলই ছিল তখন এই বইয়ের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী।তাদের মতো, তাদের সুরে, তাদের চোখ দিয়েই আপামর মানুষ নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল আজ।আজকের তারিখে, ১৬৮ বছর আগে।
আঙ্কল টম'স কেবিন। রূপকার হ্যারিয়েট বিচার্স স্টো।প্রাণ পেয়েছিল পাঠকের হাতে।উনিশ শতকের সেরা উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত বইটি যখন প্রকাশিত হয়, তখনও আমেরিকায় দাসপ্রথা বিরোধী মনোভাব ছিল খুবই কম।
ফার্মের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়।মালিক ঠিক করলেন আর্থিক দায় কাঁধ থেকে নামাতে বিক্রি করবেন দুই প্রীয় ক্রীতদাসকে।সেখানেই শুরু গল্পের যাপন। গল্পের চলন এবারে হয়ে ওঠে সমাজের দলিল।মালিকের বদল হতে থাকে। একইভাবে বদলাতে থাকে টমের ভাগ্য লিখন। একসময় এমন আসে যখন ভাগ্যের ফেরে চাবুক ওঠে তার হাতেই। সামনে পিঠ পেতে তার মতনই আরও এক ক্রীতদাস।
কী করবেন তিনি? চাবুক ছুড়ে ফেলেছিলেন। ১৮৩০ এর দশকে দক্ষিণ ওহাইয়োতে থাকতেন করতেন হ্যারিয়েট। সাক্ষাৎ হল দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া কিছু মানুষের।তাদের কাছ থেকে সরাসরি জানতে পারেন দাসত্ব জীবনের ভয়াবহতার কথা। হ্যারিয়েট সব সময়ই বলেছেন, কোনও নির্দিষ্ট দাসের জীবন নির্ভর নয় তাঁর উপন্যাস।
আংকেল টম'স কেবিন প্রকাশের ঠিক পরের বছরই তিনি আরেকটি বই প্রকাশ করেন। ‘দ্য কি টু আংকেল টমস কেবিন’। এই বইয়ে তিনি দেখাতে চাইলেন সত্যিকারের দাসদের কষ্টের জীবনের কথা।দাসত্ব থেকে পালিয়ে আসার কথা। তবে তিনি সাবধানতার কারণে পালিয়ে যাবার ব্যাপারে বিস্তারিত লেখেননি। এই বইটি আমেরিকার দাসপ্রথা সম্পর্কিত অপরাধগুলোর একটি দলিল বলা যেতে পারে।
সবাইকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে এই উপন্যাস। দাসত্ব নিয়ে, দাসদের কষ্ট নিয়ে। গল্প বলার ধরণের জনপ্রিয়তা সবাইকে নতুন করে ভাবিয়ে তোলে।সাধারণ জনগণ নিজেদের অবস্থান থেকে দাসদের অবস্থা বিবেচনা করার সুযোগ পায়। ফলে খুব দ্রুত দাসপ্রথা বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়ে মার্কিন পাঠকদের মধ্যে।
এই অনুভূতি ঠিক সেই কোনও ছুটির দুপুরে বাঙালি শিশুর হীরক রাজার দেশে দেখা আর একই ছব আঠারোর কোঠা পেরিয়ে প্রশ্নভরা দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার পার্থক্যের মত সূক্ষ্ম।১৮৬০ সালে ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে আব্রাহাম লিংকনকে মুখোমুখি হতে হয় এমন এক সংকটের, যার সামনে পড়তে হয়নি তার আগে কোনও আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে। গৃহযুদ্ধ।
গৃহযুদ্ধের পেছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করেছিল। কোনও সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু ১৮৩০ এর দিক থেকেই চলে আসা দাসপ্রথা বিরোধী আন্দোলনের পালে প্রথম হাওয়া ছোটায় হ্যারিয়েটের আংকল টম'স কেবিন।দাসপ্রথার অন্ধকার সময় কাটিয়ে উঠেছে সকলে। তবুও ইতিহাসও তো বারে বারে ফিরে আসে। একইভাবে ফিরে আসে সেইসব রোম হর্ষক লজ্জার দৃশ্যপট গুলি।
দাস প্রথা চালু না থাকলেও, চালু আছে সেই মনোভাবের দৃষ্টিপাত। আজও রক্তে বয়ে চলেছে সেই আদিম কীট। চামড়ার রঙের পার্থক্য মানুষকে ভাগ্যের দাসে পরিণত করতো।লড়াই চলেছে। লড়াই চলতেই হতো। বদলেছে পিঠে চাবুক মেরে সভ্যতার কালিমা লেপে দেওয়ার অভ্যাস। সেই সন্ধিক্ষণে পরিবর্তনের এক উজ্জ্বল শামিয়ান সাজিয়ে রয়েছে এইসকল লেখা।যা বারেবারে ভাবিয়ে তোলার প্রতিষেধক। ভাবিয়ে তুলতে অগ্রজ সেই সমস্ত লেখনীকারেরা ।