তিনি নায়ক, তবে সাধারণ নন!
সত্যজিত এর ভাবনায় তিনি অলৌকিক। তাঁর কর্মকাণ্ড অনুকরণের কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননা তাবড় নায়কেরা।
তিনি প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু। বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে সদ্য পা রেখেছেন বাংলার রুপোলী দুনিয়ায়।
ছেলেবেলার অনেক অ্যাডভেঞ্চার উঁকি দেয় তাঁর নামে। প্রতিভার একচ্ছত্র অধিকারী তিনি। গিরিডি তে আছে নিজস্ব ল্যাবরেটরি। সেই প্রযুক্তি দেখলে ভিরমি খাবেন আজকের মার্কিন ভি এফ এক্স ।
এয়ার কন্ডিশনিং পিল, ওমনিস্কোপ, অ্যানায়হিলিন। এরকম সৃষ্টি তাঁর সকালের টেবিলের জল খাবার।
সদ্য পার হয়ে আসা ২০১৯ -এর শেষেই সত্যজিত পুত্র সন্দীপ রায় বাঙালিকে দিয়েছেন শীত উপহার। সেই উপহারে আবার শৈশবের ওম্। প্রফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো।
কাহিনী বিস্তারে বলা আছে, প্রফেসর শঙ্কুর যাবতীয় সৃষ্টি; শুধু তাঁর জাদুহস্তেই সম্ভব।
আসলে এই সৃষ্টি বিজ্ঞানের অবদান নয়। রচয়িতার শিল্পী সত্তা এর জন্মদাত্রী। বাস্তবে যা নাগালের বাইরে, তাই তো অবচেতনে বিশ্বজয়ের অঙ্গীকারবদ্ধ।
আর তাই অবচেতনের প্রাপ্তি বাস্তবে মূল্যহীন।
কারণ? গল্পে জানা যায়, প্রফেসরের বিদেশী বন্ধু ভূবিদ্ জেরেমি সণ্ডার্স কর্কট রোগে আক্রান্ত। সেই মারণ রোগের সঞ্জীবনী রয়েছে প্রফেসরের কাছে। স্বর্ণপর্ণী। তবুও সেই জীবনদায়ী ওষুধ এর ফর্মুলা তিনি বাজারে আনেননা ।
প্রশ্ন থেকেই যায়। তাঁর ওপর কি প্রকৃত নায়ক এর তকমা এঁটে দেওয়া যায়?
কেউ কেউ তাঁর বিজ্ঞানী পরিচয় কেও মানতে নাক সিঁটকোন। বৈজ্ঞানিক সত্যের ভিত্তিই হল পরিবর্তনের সত্যতা। দার্শনিক কার্ল পপারের কথায় যে ঘটনার একবারের বেশি পুনরাবৃত্তি হয়না- তা বৈজ্ঞানিক সত্যের সীমানা পেরোয়না।
এদিক থেকে প্রফেসরের কীর্তি প্রশ্ন সাপেক্ষ।
শঙ্কু বস্তুতই একজন আবিষ্কর্তা। এই কারনেই সত্যজিতের ভাবনায় তিনি লৌকিক নন। অতএব ইহ জগতের দেবতারও সাধ্যি নেই, শঙ্কু কে চ্যালেঞ্জ জানায়! হালের বাংলা ছবিটিতেও একই দর্শনে চলে প্রফেসর শঙ্কুর কিস্তিমাত কা কিস্সা ।
তবে, সুপার হিরোর বৈশিষ্ট্যে সাজতে গিয়ে, প্রফেসর বাবু কিন্তু বিজ্ঞানীর কোট থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
লেখক, পরিচালক, পাঠক ও দর্শক কি তা আঁচ করেছেন ?