নানাকারণে জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মুখের ঘায়ের শিকার হন মানুষ। কখনো জেনে আবার কখনো না জেনে। মুখের ভিতরে যখন ঘা হয় তখন খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। প্রচন্ড ব্যাথার সাথে জিভে স্বাদ না থাকা এই দুইয়ের প্রভাবে জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। প্রথম দিকে এই ঘায়ের দিকে আমরা নজর না দিলেও আমাদের চেতনা হয় যখন সেই ঘা রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। মুখের ঘা থেকে যে কতরকমের বিপদ হতে পারে তা অনেকেরই অজানা। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, হৃদরোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো কঠিন অসুখ শরীরে বাসা বাঁধছে এই সামান্য কারণ থেকেই।
মুখের অভ্যন্তরে এই ঘা হয় কিভাবে? আমরা অনেকসময়ই খাবার খাওয়ার সময় জিভের প্রান্ত কামড়ে ফেলি। একবার জিভের অংশ কামড়ে ফেললে বারবার সেই জায়গাটিতে কামড় পড়তে থাকে। কখনো অতিরিক্ত গরম খাবার খাওয়ার ফলে জিভ পুড়ে গিয়ে তার ছাল উঠে যেতে পারে। সেই স্থানটিতে পরে কিন্তু ঘা হয়ে যেতে পারে। এরকম নানা সাধারণ কারণেই মুখগহ্বরের ভিতরে ঘা হতে পারে। প্রথম দিকে যথারীতি কেউই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। কিন্তু এই সামান্য জিনিসই একদিন নিতে পারে প্রাণঘাতী কোনো রোগের রূপ।
অনেকসময়ই দেখা যায় যারা ধূমপান করেন বা যারা জর্দ্দা দিয়ে দিনে বেশ কয়েকবার পান খান তাদের মুখে এইজাতীয় ঘা হওয়ার চান্স বেশি থাকে। এছাড়াও গুটখাজাতীয় জিনিস দীর্ঘক্ষণ মুখে রেখে দেওয়ার ফলেও মুখে ঘা এবং শেষ পর্যন্ত সেই ঘা থেকে ক্যান্সার হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানালেন, ভিটামিন বি এর অভাবজনিত কারণেও মুখে ঘা হতে পারে।
মুখে ঘা হলে সঙ্গে সঙ্গে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। চলুন আজ জানা যাক মুখের ঘা কমানোর সহজ কিছু পন্থা-
১) হালকা ঘায়ের ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসার দরকার পড়ে না। অল্প ঘা হলে তা কিছুদিন পরে নিজেই কমে যাবে। এই সময় খুব বেশি গরম বা খুব ঝাল খাবার খাবেন না।
২) বেশ কয়েকদিন হয়ে যাওয়ার পরেও যদি মুখের ঘা না কমে এবং ধীরে ধীরে তা বড় হতে থাকে তাহলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩) মুখের ভিতরে যদি অনেকখানি জায়গা জুড়ে এই ঘা হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসক নিশ্চয়ই স্টেরয়েড ডেক্সামিথাসনযুক্ত কোনো মাউথ ওয়াশ দেবেন। এইজাতীয় মাউথওয়াশ মুখের ভিতর থেকে জীবাণু কাটানোর পাশাপাশি ঘায়ের জ্বালা থেকেও মুক্তি দেবে।
৪) মুখের ব্যাথা থেকে উপশম পাওয়ার জন্য বাজারে নানা সামগ্রী পাওয়া যায় যেমন ক্রিম, জেল, সল্যুশন প্রভৃতি। বেশিরভাগ মানুষ মুখের ঘায়ের জন্য এইজাতীয় জিনিস ওষুধের দোকান থেকে নিজেরাই কিনে নেয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সেই ক্ষেত্রে কোন ওষুধটি প্রয়োজন তা চিকিৎসকই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। তাই মুখের ঘা বড় আকার নিলে কখনোই অবহেলা করলবেন না। যত তাড়াতাড়ি পারবেন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।