প্রথম ভারতীয় শেফ হিসেবে ফ্রান্সের সন্মানে অভ্যর্থিত হলেন বাংলার প্রিয়ম চ্যাটার্জী। সোমবার, ভারতে নতুন করে সৃষ্টিশীল রান্না পুনরুদ্ধার করার জন্য তাঁকে ফ্রান্স সরকারের পক্ষ থেকে 'অর্ডার অফ দ্য এগ্রিকালচারাল মেরিট' সন্মান প্রদান করা হয়। এখনও পর্যন্ত প্রিয়মই একমাত্র ভারতীয় ব্যক্তি যিনি এই সন্মানে ভূষিত হয়েছেন।
১৮৮৩-তে প্রথমবারের জন্য অর্ডার অফ দ্য এগ্রিকালচারাল মেরিট প্রদানের ভাবনা উঠে আসে এবং ক্রমেই তা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। সে বছর থেকেই খাদ্যশিল্পে অনবদ্য অবদানের ফলস্বরূপ ফরাসি প্রজাতন্ত্রের পক্ষ থেকে এই বিশেষ পুরষ্কার প্রদান করা হয়ে থাকে।
প্রথম জীবনে সেনাবাহিনীতে যোগদান করার ইচ্ছে থাকলেও, পরে সেই ইচ্ছে রন্ধনশিল্পে পর্যবসিত হয়। মূলত পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যপূর্ণ রান্নার পদগুলি নতুন করে ব্যবহার করে, তাতে ফ্রেঞ্চ টুইস্ট দিয়ে খাদ্যের এক নতুন রূপ বিস্তার করে থাকেন প্রিয়ম।
“এই মূহুর্তে স্বপ্নের মধ্যে বাস করছি, কোনো শব্দ বা বাক্য দিয়ে তা ব্যক্ত করা যাবে না,” বলছেন বছর তিরিশের প্রিয়ম।
ব্যতিক্রমী রাঁধুনী বাঙালি শিল্পী পরিবারের মধ্যে দিয়ে কেটেছে ছেলেবেলা, ফিস্টের জন্য আলাদা কোনো পরবের অপেক্ষায় থাকতে হত না, ফিস্ট সেখানে ছিল নিত্য আয়োজন, ফলে স্বভাবতই ছোটো থেকে অবিচ্ছেদ্যভাবে রান্নার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিলেন তরুণ প্রিয়ম, সে ভোজনই হোক বা পরিবেশন।
রান্না ছাড়াও সঙ্গীত এবং অন্যান্য শিল্পকর্ম তাঁকে ছোটো থেকেই অনুপ্রাণিত করতো।
রন্ধনশিল্প চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করার পিছনে যে দুটি মুখ্য ঘটনা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল তা হল, পরিবার ও ফ্রান্স। হায়দ্রাবাদের পার্ক হায়াতে পেশাদার শেফ হিসেবে প্রথম হাত পাকানোর সময়ই উপলব্ধি করেছিলেন, ফরাসি রন্ধনপ্রণালীই তাঁর আসল পথ। কর্মসূত্রে সেখানে ফরাসি শেফ জঁ ক্লদের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে। তিনিই প্রিয়মকে আবেগের সঙ্গে যথাযথ ফরাসী রন্ধনপ্রণালী আয়ত্তে আনার প্রশিক্ষন দেন। প্রশিক্ষন প্রক্রিয়া যত এগোতে থাকে ততই ঘনিষ্ঠভাবে ফ্রান্সের প্রেমে আবদ্ধ হতে থাকেন প্রিয়ম।
মেহরৌলি’র রুহ এবং ক্লা’তে প্রধান শেফ হিসেবে কাজ করার পর বর্তমানে তিনি ফ্রান্সের জাঁ' রেস্তোঁরায় প্রধান শেফের পদে নিযুক্ত রয়েছেন।
“ফরাসি রন্ধনপ্রণালী প্রচারের জন্য এবং তাতে আপনার অনস্বীকার্য অবদানের জন্য এই সন্মান আপনার প্রতিভাকে চিহ্নিত করছে,” নয়াদিল্লীতে পুরষ্কার প্রদানের সময় ভারতে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দ্রে জিগলার মন্তব্যটি করেছেন।
সব মিলিয়ে এই দুর্মূল্য সন্মান গ্রহণ করার পর প্রিয়মের পাশাপাশি খুশি তার পরিবার সহ স্বজনবৃন্দ। তবে প্রিয়ম জানিয়েছেন, আগামীদিনে ফরাসি রান্নার সঙ্গে ভারতীয় রান্নার মেলবন্ধন না ঘটিয়ে বরং ফরাসি পদ্ধতিতে ভারতীয় রান্নাকে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।