বাংলার প্রীতিকণা নকশিকাঁথার জাদুতে জয় করেছেন পৃথিবী

ইন্টার ন্যাশনাল ফোক আর্ট মার্কেটে জ্বলজ্বল করে তাঁর নাম আর ছবি। প্রীতিকণা গোস্বামী। দেশ ভারত। মিডিয়া টেক্সটাইল।

এই মুহূর্তে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়া এক নাম সোনারপুরের প্রীতিকণা গোস্বামী। নকশিকাঁথার জাদুতে জয় করে নিয়েছেন গোটা পৃথিবী। সাদামাটি শাড়ি, চোখে চশমা আর ধীরস্থির চাউনিতে আটপৌরে টান। দেখে বোঝার উপায় নেই শিল্পের পরিসরে কীভাবে তিনি বদলে দিয়েছেন আরও অনেক মানুষের জীবন। তাঁকে দেখে কীভাবে অনুপ্রাণিত হয় আরও বহু মুখ, সেই সব কাহিনিও থেকে যায় নেপথ্যে। নীরব ভাষায় কথা বলে চলে কেবল তাঁর সূচ আর সুতো। তারা বলে চলে জীবনের গল্প।

কিশোরীবেলায় হারিয়েছিলেন বাবাকে। তখন সবে বছর দশেক। সংসারের দায়িত্ব সেই বয়সেই এসে পড়ে কাঁধে। মা আর পাঁচ বোনকে নিয়ে সংসার। বাবার মৃত্যুতে অথৈ জলে। তবে ছোটবেলা থেকে সূচিশিল্পে আগ্রহ ছিল। তাঁর বান্ধবী রমা দাস সেলাইয়ের কাজ করতেন। সেই কাজ উৎসাহিত করেছিল তাঁকেও। কলকাতায় পীতাম্বরি নামে একটি সংস্থায় যোগাযোগ ঘটে বান্ধবীর সূত্রেই। কাঁথা স্টিচের পোশাকের প্রতিষ্ঠান। সেখানে আবার অন্যরকম এক ঘটনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল তাঁর হাতের জাদু। পথ পেয়েছিলেন জীবনে এগিয়ে চলার। 

প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম ছিল কাজের জন্য শাড়ির অর্ডার বাড়িতে নিয়ে গেলে ৫০ টাকা জমা রাখতে হবে। কিন্তু প্রীতিকণা দেবীর কাছে কাছে অত টাকা জমা রাখার সামর্থ্য ছিল না। তাই ৩০ টাকা জমা রেখে কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর আগ্রহ দেখে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্ত্রী সেখানে বসেই তাঁকে কিছু একটা সেলাই করে দেখাতে বলেন। কাজ দেখে অবাক হয়ে যান তিনি। টানা ১৫ বছর যুক্ত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।

চলতে থাকে তাঁর নকশি বুননের কাজ। সেই সঙ্গে জীবন। ১৯৭৭ সালে বিয়ে হয়। বিয়ের পরও চালিয়েছেন পড়াশোনা। ভর্তি হয়েছিলেন সিটি কলেজে। সন্তানরা আসে।

১৯৯০ সালে ঘুরে যায় তাঁর জীবনের অভিমুখ। ১৯৯০ সালে ওয়েস্টবেঙ্গল ক্রাফট কাউন্সিল থেকে নকশিকাঁথার কাজের অর্ডার আসে। ক্রাফট কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের তৎকালীন চেয়ারপার্সন তাঁকে  পরামর্শ দেন ওয়ার্কশপ শুরুর। দক্ষিণ ২৪ পরগ্ণার নানা প্রান্ত থেকে মহিলারা আস্তে শুরু করে তাঁর কাছে সেলাই শেখার জন্য। তাঁদের কাঁথা স্টিচের কাজ শেখাতেন। আজও বিনা পারিশ্রমিকে মহিলাদের সেলাইয়ের কাজ শেখান তিনি। কমলাদেবী কাঁথা সেন্টারের নাম এখন লোকের মুখে মুখে ফেরে। তাঁর কাজকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন এনআইএফটি পাশ ফ্যাশন ডিজাইনার মেয়ে মহুয়া লাহিড়ি।

২০০১ সালে রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম জাতীয় পুরস্কার তুলে দেন শিল্পীর হাতে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চেও পৌঁছে গিয়েছে তাঁর কাজ। বিদেশে কাঁথাশিল্পের ওয়ার্কশপও করিয়েছেন। ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারী পদ্মশ্রী প্রাপক হিসেবে নাম ঘোষণা হয় তাঁর। এই সম্মান তাঁর সারাজীবনের কাজের স্বীকৃতি।   

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...