বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, লন্ডন শারদোৎসব সংস্থা এবং ফ্রেন্ডস অফ কেনসাল গ্রিন সিমেট্রির উদ্যোগে বহুদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমাধিস্থলটি গত বছর নতুনভাবে সংস্কার করা হয়। গত রবিবার অর্থাৎ ৪ আগস্ট উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের গ্র্যান্ড ইউনিয়ন ক্যানেলের কনসাল গ্রিন সমাধিক্ষেত্রে আয়োজন করা হয়েছিল 'ফরগটেন পাইওনিয়ার' নামাঙ্কিত এক স্মরণসভার। ১৮৪৬ সালে লন্ডনে প্রয়াত দ্বারকানাথ ঠাকুরকে এই সমাধিক্ষেত্রেই সমাহিত করা হয়েছিল।
এ বছর ছিল প্রিন্স দ্বারকানাথের ২২৫ তম জন্মবার্ষিকী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতে নবজাগরণের ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। ভারতের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তা বলাই বাহুল্য। বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলার আমূল পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলেন সুদূরপ্রসারী এই ব্যক্তিত্ব।কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের আগেই তিনি নিজের সাক্ষর রেখেছিলেন।যদিও এই প্রজন্মের বেশিরভাগই সেই তথ্য সম্পর্কে অবহিত নয়। তাই লন্ডনে অবস্থিত নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালি এই শিল্পপতিকে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং তাঁর মহান চিন্তাধারার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেই সেখানে বসবাসকারী বাঙালি তথা ভারতীয়রা এগিয়ে এসেছেন তাঁর জন্মবার্ষিকী পালনে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বছর তাঁর জন্মবার্ষিকী পালিত হল। গত বছরই বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, লন্ডন শারদোৎসব সংস্থা এবং ফ্রেন্ডস অফ কেনসাল গ্রিন সিমেট্রি সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিবছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রিন্স দ্বারকানাথকে স্মরণ করা হবে।
এ বছর স্মরণসভায় যোগদান করার পাশাপাশি ভারতীয় হাই কমিশনের কাউন্সিলর ‘মহম্মদ রশিদ খান’ এবং ফ্রেন্ডস অফ কেনসাল-এর হেনরি ‘ভিভিয়ান নেইল’ বক্তব্য রাখেন। স্ত্রী দিগম্বরী দেবীর সঙ্গে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সম্পর্ক নিয়ে বক্তব্য রাখেন গবেষক ‘ডঃ সাগরিকা গোলদার’। দ্বারকানাথ ঠাকুরের জীবনযাত্রা নিয়ে বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ‘অমিত গুহ’। লন্ডন শারদোৎসব সংস্থার সভাপতি ‘অনির্বান মুখোপাধ্যায়’ জানান, এনিয়ে দ্বিতীয়বার দ্বারকানাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী পালিত হল। এই সমাধিস্থলের কথা ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে যথেষ্টভাবে প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিবেশন করা হয় সেদিন।
জয়েন্ট স্টক কমার্শিয়াল ব্যাংক ইন ইন্ডিয়া, ইউনিয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি চা শিল্প এবং নীল চাষের প্রতিও তিনি আগ্রহী ছিলেন। বিভিন্ন রকম চ্যারিটি-র সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও পরাধীন ভারতের সেই সময়ে যে সমস্ত সামাজিক সংস্কার ঘটেছিল, তার পুরোধা হিসেবে ছিলেন দ্বারকানাথের প্রিয় বন্ধু রামমোহন রায়। রামমোহনের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও সেই সব সংস্কারের সপক্ষে মত পোষণ করতেন।
এ হেন শিল্পপতির সমাধিস্থলে জন্মবার্ষিকী পালন করে লন্ডনে অবস্থিত বাঙালি তথা ভারতীয়রা যথার্থই প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরকে সম্মান জ্ঞাপন করেছেন।