অনেকটা প্রফেসর শঙ্কুর গল্পের মত যেখানে চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে মহাজাগতিক দৃশ্য, কিন্তু বাস্তবে এই পরীক্ষা রীতিমত চ্যালেঞ্জিং। মানুষ চলেছে মঙ্গলে। নিজেকে মহাকাশ অভিযানে পাঠাতে এ যাবৎকালে যতরকম প্রস্তুতির সম্মুখীন হয়েছি আমরা তার মধ্যে মঙ্গলে যাবার প্রস্তুতিপর্ব সবচেয়ে কঠিনতম। এর কোন বিকল্পও নেই, বিরূপ পরিস্থিতিতে যেখানে যেমন চাইলেই তেমনি সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, এমন অবস্থায় নিজেকে তৈরী করে নিতে প্রয়োজন বাস্তব অভিজ্ঞতা। মঙ্গলে যাবে এমন মহাকাশচারীদের জন্য নাসা তৈরী করেছে এমনি মায়া বাস্তব।
মঙ্গল যাত্রায়, মঙ্গলে বসবাস করতে নিজেদের প্রস্তুত করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মহাকাশচারীরা। তাদের জন্য মঙ্গল গ্রহে বিপরীত পরিস্থিতিতে টিকে থাকার পরীক্ষা ব্যবস্থা চলছে মর্ত্যেই। যেমনটা হতে পারে ক্যাপসুলে বসবাসকারী মহাকাশচারীদের সাথে। মহাকাশযানের ভিতরে শব্দ, তাপমাত্রা, খাবারের প্রাপ্যতা, বিশ্রামের সময় এবং প্রাকৃতিক কর্মেও সাড়া দেওয়ার মত প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে মহাজাগতিক অভিজ্ঞতার ভিতরে দিয়ে পরীক্ষা করা হয় দুর্গম পরিস্থিতিতে টিকে থাকার মত মহাকাশচারীদের।
প্রস্তুতি পর্ব যখন মঙ্গলে টিকে থাকতে পারবে এমন মহাকাশচারীদের জন্য, তখন টিকে থাকার পরীক্ষা আরো কঠিন। মাত্র পাঁচ-ছশো বর্গফুটের ভিতর চার থেকে ছয় জন মহাকাশযাত্রী থাকবেন। একটা লম্বা সময়ের জন্য থাকবার ব্যবস্থা এই ছোট্ট জায়গায়র ভিতরেই। দরজা রয়েছে কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পরেই শুধু খুলবে সেটি। এ কদিনের সকল কিছুর ব্যবস্থা এই নির্দিষ্ট স্থানটিতে। প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষাটি চালানো হয়েছিল এই অভিজ্ঞতার ভিতর টানা ৪৫ দিন থাকবার জন্য। এই বারের লক্ষ্য ১২০ দিন। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে থাকতে পারে মহাকাশচারীরা সেটাই পর্যবেক্ষন করবার।
৪৫ দিনের প্রথম পর্যবেক্ষণ পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছিল চার জন মহাকাশচারিকে। পৃথিবীর অন্যান্য সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল তাদের একদিন। যান্ত্রিক শব্দ-কাঁপুনি -তাপমাত্রায় একদম ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল মহাকাশ যাত্রার অভিজ্ঞতা। হিউস্টন জনসন স্পেস সেন্টার এর হিউম্যান এক্সপেরিমেন্ট রিসার্চ এনালগ (হেরা)-এ সাজিয়ে তোলা হয় এই ধরনের পরীক্ষার মঞ্চ। এ ধরনের পরীক্ষায় 'হিউম্যান এক্সপেরিমেন্ট' বিষয়ে বেশ বিতর্কের সম্মুখীন হয়ে এসেছে মহাকাশ গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান নাসা। অনেকেরই দাবি এমন পরীক্ষায় ফলাফল আশানুরূপ মিলছে না। তাই এবারে আরো সতর্ক হয়ে নতুন পর্যবেক্ষন শুরু করতে চলেছে নাসা। এবারের পরীক্ষায় নাসার হাতে রয়েছে আরো এমন কিছু তথ্য যা আগের পরীক্ষার সময় ছিলোনা। সেসব তথ্যকে কাজে লাগিয়ে এবারের পরীক্ষা অনেক বেশি কার্যকরী হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন নর্থ উস্টারন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নসির কন্ট্রাক্টর।
নতুন পর্যবেক্ষণে মহাকাশচারীরা থাকবেন একটি ছোট ক্যাপসুলে। যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিকূলতা নিয়েও এবারে যোগ করে হয়েছে নতুন মাত্রার পরীক্ষা। ২৫ কোটি মাইল দূরত্বে অবস্থিত মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে কোন বার্তা পাঠালে তার উত্তর পেতে সময় নেবে প্রায় ২০ মিনিট। এই অভিজ্ঞতাটিও যোগ করা হবে নতুন পর্যবেক্ষণে। এ ধরনের পর্যবেক্ষণে যোগাযোগের এমন চ্যালেঞ্জ এর আগে নেননি মহাকাশচারীরা। আগামী ১৫ই মার্চ থেকে মস্কোর 'সিরিয়াস'-এ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে মার্সে যাবার জন্য ১২০ দিনের পর্যবেক্ষনমূলক পরীক্ষা। এই পর্যবেক্ষণে অংশগ্রহণ করবেন দু'জন মার্কিন নাগরিক এবং চার জন রুশ নাগরিক। বাছাইপর্বে টিকে থাকবে কারা? এ বিষয়ে নর্থ-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লেসলি ডিচার্চ জানিয়েছেন অতিমানবীয় গুণসম্পন্ন, যারা শারীরিক এবং মানসিক ক্ষমতায় অনন্য, অত্যাধুনিক বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন এমন যাত্রীই হবেন আগামীর মঙ্গল যাত্রীদের একজন।