কুম্ভ, সে অর্ধই হোক আর পূর্ণই হোক-তার একটা আলাদা মহিমা রয়েছে। এবারে সাগর মেলার পাশাপাশি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে কুম্ভ মেলারও। সাগর স্নান সেরেই বহু পুণ্যার্থী চলে যাবেন সোজা কুম্ভ মেলায় শাহীস্নান সারতে। কেউ হয়তো ১৫ দিন বা কেউ ১ মাস আগে বেরিয়েছেন গঙ্গা স্নান করে পুণ্যলাভের উদ্দেশ্যে। দুটি মেলায় স্নান করে পুণ্যার্জনের সুযোগ কেউই ছাড়তে চাইছেন না। আমাদের গঙ্গাসাগর যেমন সেজে উঠেছে পুণ্যস্নানের উদ্দেশ্যে, তেমনি প্রয়াগের অর্ধকূম্ভও কিন্তু পিছিয়ে নেই। সেজেগুজে প্রস্তুত হয়ে উঠেছে আগত সমস্ত পুণ্যার্থীদের স্বাগত জানাতে।
এবারের কুম্ভ অন্যান্য কুম্ভমেলার তুলনায় অনেকটাই সুসজ্জিত বলে মানছেন অনেকেই। এমনিতে আমাদের বয়স্ক সন্ন্যাসীরা বলেন- প্রয়াগের কুম্ভ নাকি রাজরাজেশ্বরী কুম্ভ। আগে সুবিস্তৃত বালিয়াড়িতে গঙ্গা-যমুনার সঙ্গমস্থল এবং অদৃশ্য সরস্বতীর তটে ঘোড়া, হাতি, উট নিয়ে বিভিন্ন বর্ণময় আখড়ার জুলুস বেরোত। বর্তমানে যদিও হাতি বাতিল, তবু তার জন্য সাজ সজ্জাতে তেমন ছেদ পড়েনি। কুম্ভস্থলের প্রতিটি স্থল, চৌরাহা এতটাই পরিষ্কার যে, মন খুশিতে ভরে ওঠে। মূল নগর থেকে দূরে বলেই বিশাল জায়গার ফায়দা তুলেছেন শিল্পীরা। শাস্ত্রী ব্রিজের প্রতিটি থাম্বা গোড়া থেকে ডগা অব্দি রামধনুর সাত রঙের প্রতীক। আর মাত্র দু'দিন বাকি। শাহীস্নান শুরু হবে ১৫জানুয়ারি। ওই দিন হবে প্রথম শাহী স্নান। রঙের শেষ পোঁচ, জলের পাইপ, পতাকা উত্তোলনে স্বেচ্ছাসেবকেরা ভীষণ ব্যস্ত। প্রায় সমস্ত আশ্রমে ভূমি পুজো শেষ। মেলা এবারে সরে এসেছে পুব দিকে। গঙ্গার স্রোত বদল হয়েছে। পশ্চিম দিকে গঙ্গার যেটুকু বালিয়াড়ি রয়েছে, সেটুকু নিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। তাই সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোই পূর্ব দিকে নিজেদের আশ্রম গড়েছেন। রয়েছে হাসপাতাল, রাত্রিবাস ও দুবেলা প্রসাদের ব্যবস্থা। থাকছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ব্যবস্থাও। কম্বল ও বস্ত্র বিতরণও যথারীতি থাকছে। আরো থাকছে বিনোদনের ব্যবস্থা এবং গান-বাজনার ব্যবস্থাও।
এবারের কুম্ভমেলার বিশেষ তথা প্রধান আকর্ষণ হল 'কিন্নর আখড়া'। হাজার বছরের ইতিহাসে রক্ষণশীল সমাজের চোখ রাঙানির মাঝেই রূপান্তরকামীরা নিজেদের মূলস্রোতে ফেরানোর দিকে আরো একধাপ এগোলো। আখড়া পুরোহিত লক্ষ্মী নারায়ন ত্রিপাঠি জানান, কুম্ভতে যোগ দিতে পেরে খুব রোমাঞ্চিত অনুভব করছেন তিনি। তাঁর মতে, তাদের সম্প্রদায় এখনও মূল স্রোতের শিল্প, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আখড়ার সম্পাদক পবিত্র জানান, গত দু'বছর ধরে এখানে আসার প্রস্তুতি চলছিল। যদিও প্রথমদিকে এই আখড়াকে অনেক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল, তবে এখন সত্যিই এখানে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে তাদের। আগামীকাল থেকে প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে শুরু হবে কুম্ভ মেলা চলবে ৪মার্চ পর্যন্ত।