৫ নভেম্বর, ১৯৭৫। ছেলেটা ব্যাট করতে গিয়ে মুখ ফেটে গেল। বয়স বছর ১২। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গিয়েই বল তার মুখে লাগে। তার দাঁত ভেঙে যায় ও নাক দিয়ে রক্ত অঝোর ধারায় পড়তে থাকে। কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে হয়। না , ছেলেটা খেলা ছেড়ে দেয়নি। বাপ কা বেটা যে। তিনি প্রণব রায়। পঙ্কজ রায়ের ছেলে। প্রাক্তন বাংলা ক্রিকেটার।
কলকাতার রামচন্দ্র স্কুলে ভর্তি হন। ৫ বছর বয়সে বাবা পঙ্কজ রায় তাকে ক্রিকেট খেলায় হাতেখড়ি করান। ৮ বছর বয়সেই ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালোবাসা গড়ে উঠে প্রণব রায়ের। সুন্দর বিশ্বাস তাকে প্রশিক্ষণ দিতেন। সুন্দর ব্যাটিংশৈলীর কারণে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। মুশতাক আলী'র একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন তিনি।
১৯৭৮-৭৯ মরসুম থেকে ১৯৯১-৯২ মৌসুম পর্যন্ত প্রণব রায়ের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন। বাবার মতোই।ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে বেশ সফলতা পান ও অসম্ভব ধৈর্য্যশক্তি ছিল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও অনেকগুলো বছর বাংলা দলের প্রধান মেরুদণ্ডকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। রঞ্জী ট্রফিতে ৪৯.৬৮ গড়ে ৩১৩০ রান করেছেন। সব মিলিয়ে ৪১ গড়ে করেছেন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার রান, যা মোটেই সেই সময় সহজ ছিল না। ১৯৮৩-৮৪ মরসুমে অসামের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ২০৬ রান করেন। সেটাই কেরিয়ার বেস্ট।
‘লাক’ খারাপ। তখন বাংলা থেকে বলার মতো কেউ ছিল না। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুটি মাত্র আন্তর্জাতিক টেস্টে খেলতে পেরেছেন প্রণব রায়। ১৩ জানুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে চেন্নাইয়ে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর, ৩০ জানুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে কানপুরে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ খেলেন।
১৯৮১-৮২ মরসুমে ইংল্যান্ড দল ভারতে আসে। উদ্বোধনী ইনিংসে ছয় রান করতে তিনি ৮২ মিনিট নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৬০ রান করলেও খেলাটি তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন অবস্থায় শেষ হয়ে যায়। পরের টেস্টে ব্যর্থ হলেও ১৯৮২ সালে ভারত দলের সঙ্গেও ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন । তবে, ১২টি প্রথম শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে মাত্র ১৭৪ রান তুলতে পেরেছিলেন। এরফলে, টেস্ট দলে আর তাকে রাখা হয়নি। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ভারত ক্রিকেট দলের নির্বাচকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য হন।
১৯৫৭ সালে আজকের দিনে জন্মেছিলেন ভারতের প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার ও বাংলার রঞ্জি জয়ী দলের সদস্য প্রণব রায়। স্কুল জীবন থেকেই ক্রিকেটে তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৯৭৩/৭৪ সালের কোচবিহার ট্রফি বিজয়ী পূর্বাঞ্চল স্কুল দলের হয়ে মধ্যাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেন। উত্তরাঞ্চলের বিরুদ্ধে ফাইনালে কপিলদেবের বোলিং এর বিরুদ্ধে ৬৯ করেন।
পরের বছর দক্ষিণাঞ্চলের বিরুদ্ধে ৫৯ রানে ৪ উইকেট নেন। ১৯৭৮/৭৯ সালের রোহিংটন বারিয়া ট্রফির খেলায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ১২৯ করেন । ওই বছর থেকে প্রথম শ্রেণির খেলা শুরু করেন এবং ১৩টি শতরান সহ ৪০৫৬ করেন (সর্বোচ্চ ২৩০ অপরাজিত)। ১৯৯১/৯২ অবধি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন। দুটি মাত্র টেস্টে ৭১ করলেও তাঁর সর্বোচ্চ রান হলো ৬০। তাঁর বাবা পঙ্কজ রায় কিংবদন্তি বাঙালী ব্যাটসম্যান, যিনি প্রথম বাঙালি টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান ও প্রথম বাঙালী টেস্ট অধিনায়ক। তাঁকে মার্চেন্ট ও গাভাস্কার এর মধ্যবর্তী সেরা ভারতীয় টেস্ট ওপেনার বলা হয়। জ্যাঠতুতো দাদা অম্বর রায় ও টেস্ট খেলেছেন। তিনি নিঃসন্দেহে বাংলার সর্বকালের অন্যতম সেরা বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। আরেক কাকা নিমাই রায় ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। প্রণব রায়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।