'বাতাসি' জায়গাটার কথা আমরা ক'জন জানি? উত্তরবঙ্গের এক প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত এই গ্রাম। কিছুটা পাহাড়ের ছোঁয়া থাকলেও সমতলেই অবস্থিত এই জায়গাটিতে বেশিরভাগ মানুষ চাষাবাদ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। আছেন বেশ কিছু মৃৎশিল্পী। মৃৎশিল্পীদের অনেকেরই অবস্থা যথেষ্ট করুণ হয়ে পড়েছিল। হাতে ঘোরানো চাকায় তাঁরা তৈরী করতেন হাঁড়ি, কলসি। নিজেরাই হাটে হাটে নিয়ে যেতেন তা বিক্রি করতে। লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা, সংসার চালানোই দায় ছিল। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের বদান্যতায় সরকারি আনুকূল্যে হাতে ঘোরানো চাকার বদলে ঘরে ঘরে তাঁরা পেলেন বিদ্যুৎচালিত চাকা। পেলেন প্রশিক্ষণ। তাতেই বদল এল তাদের ব্যবসায় এবং জীবনযাপনে। শুধু আর হাঁড়ি-কলসি নয়, মৃৎশিল্পীদের হাতের জাদুতে তৈরী হচ্ছে জলের বোতল, ফুলদানি, নকশা করা প্রদীপ, পিগি ব্যাঙ্ক, ধূপদানি ইত্যাদি নানান শৌখিন সামগ্রী। এখন আর হাটে গিয়ে পসরা সাজিয়ে জিনিস বিক্রি করতে হয় না। ব্যবসায়ীরাই গাড়ি, ভ্যান ইত্যাদি নিয়ে আসেন পালপাড়ার দোরগোড়ায়। হাটে বিক্রি করা সামান্য বিক্রেতা থেকে তারা এখন ছোটোখাটো এন্টারপ্রেনার।
স্থানীয় জায়গা বা রাজ্যের তুলনায় পার্শ্ববর্তী নেপালে অনেক গুণ বেশি বিক্রি হয়। ভারত-নেপাল চুক্তি অনুযায়ী দু'দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যে কোনো বাধা নেই। সেখানে যেহেতু কোনো কুমোরের পেশা বলে কিছু নেই, তাই ভারত থেকেই মাটির জিনিসপত্র সেখানে যায়। প্রতিদিন বাতাসি থেকে ৩০০-৪০০ ভ্যান মাটির সামগ্রী নিয়ে নেপাল যাচ্ছে। নেপালের কাঁকরভিটা, ধুলাবাড়ি, বিরতা মোড় হয়ে সে সব সামগ্রী ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র নেপালে। বিদ্যুৎচালিত কুমোরের চাকা আসার পর অনেক কম সময়ে অনেক বেশি সামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে। নেপাল এখনও বেশ দরিদ্র দেশ। সকলের ঘরে ফ্রিজ সহজলভ্য নয়। মাটির জিনিসে জল খুব ঠান্ডা থাকে। তাই গরম কালে সেখানে মাটির জলের বোতলের চাহিদা প্রচুর। প্রশিক্ষণ এবং বিদ্যুৎচালিত কুমোরের চাকা ব্যবসার পরিধিটাই বাড়িয়ে দিয়েছে বাতাসীর মৃৎশিল্পীদের। তাই মৃৎশিল্পে পেশার টানে এখন অনেকেই আসছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের শিলিগুড়ির জেনারেল ম্যানেজার গৌতম চৌধুরীর মতে, বিদ্যুৎচালিত কুমোরের চাকায় এদেশের মৃৎশিল্পের চেহারাটাই পাল্টে গিয়েছে। বাতাসীর মৃৎশিল্পীরা এখন যথেষ্ট উদ্যমে কাজ কর্ম করছেন।