মোবাইল, ভিডিও গেমের ঠিক আগের যুগে যখন বই রমরমিয়ে পাঠককুলের একচেটিয়া আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল তখন একাধিক চরিত্র জীবন্ত হয়ে উঠতো। উঠতো কেন বলছি ! তারা তো আজও একই ভাবে জীবিত। এই চরিত্রগুলো পরীক্ষার আগে আরো বেশি করে প্রকট হতো। এই বিষয়টা কিন্তু বেশ অন্যরকম। কোনো না কোনো ভাবে তারা জায়গা করে নিতো বালিশের তলা বা পড়ার বইয়ের নীচে। সুযোগ পেলে মায়ের চোখের অলক্ষ্যে এক নিঃশ্বাসে খানিক তার সাথে মোলাকাত সে তো প্রায় সবারই এক অভ্যাস ছিল। আর তার প্রভাব এতটাই মনে গেঁথেছিল যে আজ সেই চরিত্রদের ঠিকানার খোঁজ পড়ে। আর সত্যি বলতে সেই চরিত্রগুলোর জন্য আজ সেই পাড়া, রেস্তোরাঁ কিন্তু সেলেব্রিটি। ঠিক, আজ এমনই একটা সেলেব পাড়া নিয়ে কিছু কথা হবে।
উত্তর কলকাতার মানিকতলার দিক থেকে আমহার্স্ট স্ট্রীটে এগিয়ে গেলে কলেজ স্ট্রিট ক্রসিং এ পড়ার আগে বাঁ দিকে আপাতদৃষ্টিতে খুবই সাধারণ একটা গলি, যা আজও স্বমহিমায় আছে। তা হলো পটলডাঙ্গা, আর এই গলির সাথে অনেকেরই ছেলেবেলার রঙিন স্মৃতি বিজড়িত। হ্যাঁ। ঠিক এখানেই ২০ নম্বর বাড়ির চাটুজ্জেদের রোয়াকে নিয়মিত আড্ডা দিত - ভজহরি মুখার্জি, স্বর্ণেন্দু সেন, কুশল মিত্র আর কমলেশ ব্যানার্জী। এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন উত্তর কলকাতার বৈশিষ্ট্য কিন্তু এই পাড়া সংস্কৃতি, রোয়াকের আড্ডা। যাই হোক নামগুলো অনেকের কাছে অচেনা হলেও সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে তা কিন্তু হওয়ার নয়। এরা হলো পটলডাঙার বিখ্যাত চারমূর্তিমান - টেনিদা এন্ড কোং। আর এই চরিত্রদের সৃষ্টি কর্তা তারকনাথ গাঙ্গুলীও অমর হয়ে আছেন। যদিও তিনি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নামেই পরিচিত।
এখানেই দীর্ঘদিন থেকেছেন টেনিদার স্রষ্টা, তিনি ভাড়া থাকতেন স্বয়ং টেনিদার বাড়িতে। থুড়ি টেনিদা থাকতেন তার বাড়ি। ৪২ ইঞ্চি ছাতি, টিকোলো নাক খানিকটা নিজের আদলেই গড়েছিলেন টেনিদা চরিত্রটিকে, যারা তাকে দেখেছিলেন এটা অবশ্য তাদের মত। কিন্তু ম্যাট্রিকে একাধিকবার ফেল, গুলবাজিতে মাস্টার এমন ছিলেন না স্রষ্টা তা বলাই বাহুল্য। ২০ নম্মরের চাটুজ্জেদের রোয়াক ছিল আসলে মুকুজ্জেদের। আজও পাড়া রয়েছে , কিছু রোয়াক সংস্কৃতিও অবশিষ্ট আছে। যদিও যাদের গল্পের টেনিদা এবং কোং এর সাথে পরিচয় ঘটে নি তারা সিনেমার পর্দায় দেখেছেন। এ প্রজন্মও খানিকটা সেই স্বাদ আস্বাদন করছে। সেটিও নেহাৎ মন্দ নয়। তবে ছবির প্রয়োজনে কিছুটা পরিবর্তন ঘটলেও বিষয়টাতে তৎকালীন বঙ্গযুবকের চরিত্রায়ন যথাযথ ভাবে ঘটেছে। আর তাতে কিন্তু এই অত্যাধুনিকতার যুগেও টেনিদা ও তার পটলডাঙ্গা আজও স্বমহিমায় স্মৃতির ও বাস্তবের মেলবন্ধনে সেলেব্রিটি হয়ে উঠেছে।