হিমঘরের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজ্যে আলু বিক্রি বন্ধের ডাক দিয়েছে 'প্রগতিশীল আলু ব্যাবসায়ী সমিতি'। এর ফলে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে খোলা বাজারে আলুর হাহাকার শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা। এমনিতেই বাজারে আলুর দাম সবসময়েই ঊর্ধমুখী। তার উপর বাজারে আলুর যোগান না থাকলে পরিস্থিতি যে খারাপ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাজার বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের আহ্বায়াক রবীন্দ্রনাথ কোলে জানিয়েছেন, “বাজারে ও হিমঘরে এখনো প্রচুর পরিমান আলু রয়েছে। তাই আলু ব্যাবসায়ীরা ধর্মঘট করলে বাজারে তার জন্য আলুর ঘাটতি হবে না।“
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির কোর কমিটির সদস্য বরেন মন্ডল বলেন,"গত জুলাই মাসের ১০ তারিখ রাজ্য সরকারের কৃষি বিপণন দপ্তরের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল হিমঘরে কুইন্টাল প্রতি আলু রাখার ভাড়া ১৪৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হচ্ছে। এই নির্দেশিকাটি পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে সরকার কার্যকর করতে চলেছে। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আলু বিক্রি বন্ধ করার জন্য ধর্মঘট ডেকেছি। আমাদের বক্তব্য, হিমঘরের এই বর্ধিত ভাড়া কবে থেকে সরকার আমাদের উপর লাগু করছে বিজ্ঞপ্তিতে তার কোনো উল্লেখ নেই। হিমঘরে আমরা যে আলু রেখেছিলাম তার ৫০ শতাংশ হিমঘর থেকে বাজারে চলে গেছে। এখন যে ৫০ শতাংশ আলু হিমঘরে রয়েছে আমরা কি তার উপর, না প্রথম থেকে যত আলু হিমঘরে ছিল তার উপর বাড়তি ভাড়া দেব তা সরকার স্পষ্ট করে বলছে না। তাই এই অবস্থায় আলু বিক্রি বন্ধ করা ছাড়া আমাদের অন্য কোনোও গতি নেই।"
বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার জয়পুরে প্রায় ৩০০ জন আলু ব্যবসায়ী, যাঁরা প্রগতিশীল আলু ব্যাবসায়ী সমিতির সদস্য তাঁরা বৈঠক করে আলু বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে রাজ্যের হিমঘর মালিক সংগঠনের তরফে শুক্রবার এই সমস্যা নিরসনের জন্য একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকে সমস্যার জট খুলতে পারে বলে রাজ্যের দপ্তর আশা করছে।
তবে রাজ্য সরকারের বাজার বিয়ষয়ক টাস্ক ফোর্সের আহ্বায়ক রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন,"হিমঘরে যে পরিমান আলু এখন মজুত আছে তাতে এই ধর্মঘটের ফলে বাজারে আলুর ঘাটতি হবে না। এই সুযোগে খুচরো ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে রাজ্য সরকার এই বিষয়টি নজরে রাখছে।"
অপর দিকে প্রগতিশীল আলু ব্যাবসায়ী সমিতির কোর কমিটির সদস্য বরেন মন্ডল বলেন, "আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত জানতে না পারছি কবে থেকে হিমঘরের এই বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হচ্ছে ততক্ষণ আমরা ধর্মঘট থেকে সরছি না বা হিমঘর থেকে আলুও বার করছি না। এর ফলে বাজারে আলুর ঘাটতি হলে আমাদের কিছু করার নেই। কেননা রাজ্য সরকার আমাদের কথা না ভেবে হিমঘর মালিকদের দাবি মতো হিমঘরের ভাড়া বাড়িয়েছে। যে আলু হিমঘরের থেকে বাজারে চলে গেছে তার জন্যও আমাদের কাছে বাড়তি ভাড়া হিমঘরের মালিকরা চাইবেন কিনা সেটার উপর আমরা নজর রাখছি। আমাদের সিদ্ধান্ত, কোনও ভাবেই আমরা এখন আর বাড়তি ভাড়া হিমঘরে আলু রাখার জন্য দেব না।"
বাজারে যোগানের সঙ্গে তাল রেখেই দাম নির্ধারণ হয়। এটাই অর্থনীতির নিয়ম। তাই বাজারে আলুর ঘাটতি শুরু হলে স্বাভাবিক কারণেই যে আলুর দাম বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে বর্তমানে ১৫ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম জ্যোতি আলু দাম। চন্দ্রমুখী আলুর দাম কিলোপ্রতি ২০ টাকা। আলু বিক্রেতাদের ডাকা ১ সেপ্টেম্বরের এই ধর্মঘটের ফলে এই দাম কোথায় গিয়ে পৌঁছয় এবং রাজ্য সরকার দাম নিয়ন্ত্রনে কি ভূমিকা নিচ্ছে সেটাই এখন দেখার।