কর্কট রোগের কাছে হার মেনে কবি-সমাজকর্মী মল্লিকা সেনগুপ্ত চলে গেছেন বহু বছর হল। আজ অর্থাৎ ২৭ মার্চ তাঁর শুভ জন্মদিন। তিনি ছিলেন প্রকৃত পক্ষে 'অগ্নিকন্যা', তাঁর কলমে ঝরে ঝরে পড়ত আগুন। তাঁর কলম গর্জে উঠত মেয়েদের তথা মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, হতাশা, লাঞ্ছনা, উপেক্ষা ও অসম সামাজিক অবস্থানের বিরুদ্ধে। ২৬ মার্চ তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে শিশির মঞ্চে আয়োজিত হয়েছিল একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান, 'মল্লিকা সেনগুপ্ত পুরস্কার প্রদান'। আয়োজন করেছিলেন প্রকাশক সংস্থা ভাষানগর, প্রতিভাস ও পরম্পরা। উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্বামী কবি সুবোধ সকার, শ্রীজাত, অদিতি বসু রায়, আবৃত্তিশিল্পী ব্রততী বন্দোপাধ্যায় সহ বহু গুণী ব্যক্তিরা। সকলেই তাঁর সম্বন্ধে নিজের ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন।
কবি সুবোধ সরকার বলেন, "মল্লিকা যে কবিতা গুলো লিখত, সেগুলো অনেক সময় বোমার মত পড়ত, তখন অনেক সমালোচনা হত, আমি প্রায় পঁচিশ-ত্রিশ বছর আগেকার কথা বলছি। কিন্তু এখন সময়টা পাল্টে গেছে। ওঁর কবিতা যেভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে গেছে বা প্রতিদিন পৌঁছচ্ছে, সেটা সত্যিই খুব উল্লেখযোগ্য। মল্লিকার কবিতা নিয়ে গবেষনা হচ্ছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে ঢুকছে। অনেক প্রান্তিক মেয়েরা, যাদের মুখে ভাষা ছিল না, তাদের মুখে মল্লিকার কবিতা, মল্লিকার ভাষা একটা অনন্য জায়গা তৈরী করেছে, ফলে মল্লিকা শুধু কবি নন, একই সঙ্গে মানবীবিদ্যার পথপ্রদর্শক।"
আবৃত্তিশিল্পী ব্রততী বন্দোপাধ্যায় বলেন, "মল্লিকা বেঁচে রয়েছেন তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে, তাঁর কবিতার মধ্য দিয়ে এবং তাঁর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে, যা আগামি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বলেই আমার বিশ্বাস। 'মাটি, জল, অগ্নি বায়ু এবং মানুষ...ভারতবর্ষ তোমাকে প্রণাম করেই শোনাতে এসেছি তোমায় কথা মানবীর ভাষ্য...' মল্লিকা তাঁর 'কথামানবীর কথা' বইতে এমন সব মহিলাদের কথা লিখেছেন, যেসব মহিলারা এক একজন 'আইকন'। ওঁর কবিতা না পড়ে মঞ্চ থেকে নেমেছি, এমনটা কখনও হয়নি। ওঁর বহু কবিতাই রেকর্ড করেছি আমি।"