বেলেঘাটার হায়দারি মঞ্জিল এখনকার গান্ধী ভবন নাম পরিচিত। ১৯৪৭ সালের ১২ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধী কলকতার এ বাড়িতেই থাকতে আসেন। তার স্মৃতিতে বেলেঘাটার গান্ধী ভবন পরিবেষ্টিত এলাকায় খুঁজে দেখা হল, এমন কারো সন্ধান যারা স্বচক্ষে দেখেছেন বাপু কে। সার্ধশত বর্ষে 'গান্ধী স্মারক সমিতি'-র উদ্যোগে বেলেঘাটার গলিতে চলছে বাপুর স্মৃতিচারণে অডিও-ভিজ্যুয়াল আর্কাইভ তৈরির প্রয়াস।
দেশভাগের সময় হায়দারি মঞ্জিলের এই বাড়িতে নিভৃতে যাপন করেছিলেন গান্ধীজি। ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্ট প্রথম স্বাধীনতা দিবসে সব রকম উৎসব থেকে নিজেকে আলাদা করে রেখেছিলেন তিনি। নিশ্চুপ সত্যাগ্রহ মেনেছিলেন বাপুজি। বেলেঘাটার এ বাড়িতে অবস্থান কালীন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বহু মানুষ আসতেন একবার গান্ধীজিকে নিজের চোখে দেখতে। এদের ভিতর যারা এখনো জীবিত আছেন তাদের বয়ানে গান্ধীজির অভিজ্ঞতা কেমন ছিল সেটাই আগামী প্রজন্মকে জানাতে চায় গান্ধী স্মারক সমিতি। তবে সে সময়ের মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব একটা সহজ সাধ্য কাজ নয়। সমিতির যুগ্ন সম্পাদক পাপড়ি সরকার জানান, প্রয়োজনে সভা করে, লিফলেট ছড়িয়ে এলাকা বাসীর কাছে জানতে চাওয়া হবে কোন স্মৃতিময় ঘটনার কথা বা কারা মহাত্মা গান্ধী কে স্বচক্ষে দেখেছিলেন। এ বিষয়ে বেলেঘাটার কাউন্সিলারদের কাছেও সাহায্য চাইবে সমিতি, গান্ধী ভবনের নানা কর্মকান্ডে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেন এলাকার কাউন্সিলররাও। উত্তাল দিনগুলোতে কেমন ছিল বাপুজীর দিন গুলো, এসব নিয়ে নতুন তথ্য সংরক্ষিত হতেই পারে। ডিজিটাল আর্কাইভের যুগে ওরাল হিস্ট্রি একটি অন্যতম মাধ্যম। সেই মাধ্যমকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে যাচ্ছে স্মৃতিচারণ সমিতির কর্মকান্ড।
গান্ধীজি বেলেঘাটায় অবস্থান কালীন প্রাতরাশে মাঝে মাঝে বেড়াতে আসতেন এখানকার প্রখ্যাত নস্কর ভিলায়। এরকমই একদিন সকালের কথা জানালেন এ বাড়ির অশোক নস্কর। কোন এক সকালে তার ঠাকুরদা হেমচন্দ্র নস্কর জানিয়েছিলেন, গান্ধীজি দুবেলা যে ছাগলের দুধ খেতেন সেটিই কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে। এ বাড়ি থেকে তখন হেমচন্দ্র নস্কর দুধ-ফলের ব্যবস্থা করে ছুটেছিলেন হায়দারি মঞ্জিলে গান্ধীজির উদ্দেশে।
হায়দারি মঞ্জিলের খুব কাছেই থাকতেন কমলা চট্টপাধ্যায়। এখন তার বয়স ৯৫ এর কোঠায়। তার স্মৃতিতে রয়েছে গান্ধীজিকে একবার প্রণাম করবার মুহূর্ত। প্রায়ই নাকি ছুটে যেতেন গান্ধীজিকে একবার দেখবার জন্য। যখন দাঙ্গায় টালমাটাল কলকতার অবস্থা তখন বাপুর পাশে হিন্দু-মুসলিম একসাথে হেঁটেছেন বেলেঘাটার গলিতে। অশোক নস্কর স্মৃতিচারণ করলেন, নিজের থেকেও লম্বা লাঠি হাতে ঝুঁকে গান্ধীজি হেঁটেছেন এই পথেই।