আজ বাঙালির গর্বের নাম পিয়ালি

আজ বাঙালির গর্বের নাম পিয়ালি। বাংলা জুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে তাঁর নাম। মাঝে কয়েক মাসের ব্যবধান, ইতিহাস গড়লেন বাংলার মেয়ে পিয়ালি বসাক। এবার মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে পা রাখলেন তিনি। আবারও তেরঙা উড়ল পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের মাথায়। কোনও রকম সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই। রবিবার ২২শে মে সকালে সাড়ে আটটা নাগাদ এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছলেন পিয়ালি।

piyali

দেশের প্রথম মহিলা হিসেবে অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়া গত অক্টোবরে ধৌলাগিরি শৃঙ্গ জয় করেছিলেন পিয়ালি। সাত মাসের মধ্যেই আবারও অনন্য কৃতিত্বের পালক জুড়লো তাঁর মুকুটে। ২০২১ ধৌলাগিরি এবং ২০১৮-তে মনাসুলু শৃঙ্গ কোন রকম সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই জয় করেছিলেন পিয়ালি। ২০১৯ সালে মাউন্ট এভারেস্টের খুব কাছে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে, অধরা ছিল মাউন্ট এভারেস্ট জয়। সেই অপ্রাপ্তির ঘটনাই তাঁর জেদকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই জেদ থেকেই এবার সাফল্য এসে গেল। কৃতিত্বের সঙ্গেই এল সাফল্য, অনন্য নজিরও তৈরি হল। এই অভিযানে প্রথম ভারতীয় মহিলা তথা প্রথম বাঙালি হিসেবেও অনন্য নজির গড়লেন। এবারও অর্থের সমস্যায় পড়েছিলেন। সব বাধা পেরিয়েই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণ করলেন বাঙালি মেয়ে। ​চন্দননগরের মেয়ে অনেক বাধা পেরিয়ে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।

শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশে অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়া মাউন্ট এভারেস্টে চড়ার নজির নেই। খুব কম সংখ্যক পর্বতারোহীই এই সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এখানেই ব্যতিক্রম পিয়ালি। তিনি ছোট থেকেই সাহসী। দীর্ঘদিন ধরেই এভারেস্ট আরোহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পিয়ালি। তবে তাঁর যাত্রার পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অর্থ। বাড়ি বন্ধক রেখে এবং নিজের যাবতীয় সঞ্চয় একত্র করেও ১৮ লক্ষ টাকার বেশি হচ্ছিল না। কিন্তু দরকার ৩৫ লক্ষ টাকা। নেপাল সরকার জানিয়ে দেয়, পুরো টাকা না পেলে এভারেস্ট অভিযান করতে দেবে না তারা। এই অবস্থায় ফেসবুকে পোস্ট করে সাধারণ মানুষের কাছে অর্থের আবেদন করেন পিয়ালি। সেখান থেকে আরও পাঁচ লাখের মতো টাকা ওঠে। তখনও দরকার ছিল ১২ লাখ। এমন সময় পিয়ালির সাহায্যে এগিয়ে আসে তাঁর এজেন্সি। তারাই আপাতত বাকি টাকা দিয়ে দেবে বলে জানায়। ফলে শেষ মুহূর্তে এভারেস্টে ওঠার অনুমতি পান পিয়ালি। গত মার্চের ২৮ তারিখ চন্দননগর থেকে এভারেস্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্ট তিনি, আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আইস স্কেটিংয়েও রয়েছে সাফল্য।আইস স্কেটিংয়ে রাজ্যের প্রথম মহিলা খেলোয়াড় তিনি। খুব ভাল যোগাসনও করেন। খুব ভালো আঁকতে পারেন পিয়ালি। ছোটবেলায় ‘কিশলয়’-এ মাউন্ট এভারেস্ট সম্পর্কে পড়ার পর থেকেই পাহাড়ের প্রতি আকর্ষণের শুরু। চন্দননগরের কানাইলাল স্কুলে শিক্ষকতা করেন পিয়ালি, শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি পর্বতারোহণ তাঁর নেশা। ছোট থেকেই এভারেস্ট জয় ছিল তাঁর স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকেই পাহাড়ের নেশা ছিল তাঁর। বাবা-মায়ের সঙ্গে পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে সেখান থেকেই পাহাড়-পর্বতের প্রতি ভাল লাগা শুরু। তারপর সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় রক ক্লাইম্বিং কোর্স করেন পিয়ালি। হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তারপর থেকে অভিযান যাত্রার শুরু। তেনজিং নোরগে, এডমন্ড হিলারিরা যেভাবে সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছিলেন, সেই গল্প রোমাঞ্চিত করেছিল তাঁকে। তারপর থেকেই পেয়ে বসে পাহাড়ে নেশা। বাবা মাও মেয়ের স্বপ্নের সফর সঙ্গী হন।

 

২০০০ সালে অমরনাথ অভিযানের সময় খুব কাছ থেকে জঙ্গি হামলা দেখেছেন পিয়ালি। কেদারনাথে গিয়ে মেঘভাঙা বৃষ্টি, তুষারধসের সঙ্গে লড়ে জীবন বিপন্ন করে, প্রায় ১০০ জন তীর্থযাত্রীকে বাঁচান তিনি। ভারতের প্রথম অসামরিক মহিলা হিসাবে অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করলেন তিনি। অদম্য সাহসের নাম হয়ে উঠলেন পিয়ালি। কোনও বাধাই তাঁকে আটকাতে পারেনি। এইভাবেই জয় করতে থাকুন পিয়ালি।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...