আচরণে নাকি মানুষের মতই। তা সে ছোট হোক আর বড়ো, মেজাজে ও বুদ্ধিতে কোনও অংশেই কম যায়না। মাঙ্কি শব্দটি এসেছে ডাচ শব্দ ম্যানিকেন থেকে। অর্থ ক্ষুদ্র মানুষ। এরা মানুষ না হলেও, ক্ষুদ্রই বটে। চরিত্রে সদা চঞ্চল ও বুদ্ধিমান। দক্ষিণ আমেরিকার বৃষ্টি অরণ্যে এদের অবাধ বিচরণ। তাদের আছে কথা বলার নিজস্ব ভাষা। স্থানভেদে বদলেও যায় সেই ভাষা। জন্ম নেয় নতুন উপভাষা। মত জ্যুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিশেষজ্ঞদের। মার্মোসেট। স্পেনীয় শব্দটির অর্থ মোনো ডে বয়সিল্লো বা পকেট বানর।
একটা স্বাভাবিক হাতের মুঠিতে জনা কয়েক একসঙ্গে ধরে যাবে, এতটাই আকারে ছোট। লেজ পায়নি। ওজনে একশো গ্রাম আর উচ্চতায় ছয় ইঞ্চি। তবে ভাগ্য করে দুই পাটি দাঁত পেয়েছে ধারালো। খাওয়ার যোগানোর অস্ত্রও সেটাই। উঁচু গাছের চুড়োর দিকে অবস্থান করে। কিন্তু বাসায় দেখা যায়না কাউকেই। সবাই খাওয়ারের খোঁজে এগাছে সেগাছে। হ্যাঁ, কিছু পোকামাকড় সাবাড় করে ঠিকই কিন্তু প্রধান খাদ্য গাছের বাকল থেকে বেরোনো একপ্রকার আঠালো রস। গাছের বাকলে গর্ত তৈরি করে দাঁতের সাহায্যে। তারপর ছেড়ে দিতে হয় দিন তিনেকের জন্য।
ব্যাস! ওমনি ফাঁকা জায়গা ভরে ওঠে রসে। তাই এদেরকে সমতলে বিশেষ দেখা যায়না। গাছের শরীর বেয়ে যাতায়াত করতে করতে পথে যেসব পোকামাকড়রা ভুল করে চলে আসে, তারাই পেটে যায়। এক লাফে সুরুৎ করে অন্য ডালে! সবচেয়ে পাতলা ডাল হলেও, ওস্তাদ ঝুলে থাকায়। করতে পারে হাঁটাচলাও। লং জাম্প প্রতিযোগিতা হলে এরা অনায়াসে টক্কর দিতে পারে মানুষকেও। এক লাফে পেরোতে সক্ষম প্রায় পনেরো ফুট উচ্চতা।
এদের সুখের পরিবারে সদস্য সংখ্যাও ছয়ের বেশি নয়। হয়ত মানুষকেই অনুসরণ করছে। আবার ভাইসে ভার্সায় মানুষও হতে পারে প্রভাবিত। এই মতামতে আলোকপাত করেছেন বেশ কিছু স্নায়ু বিজ্ঞানীরা। মা মার্মোসেটরা যমজ সন্তান প্রসবে বর প্রাপ্ত। সকলেই শিশু জন্মের সময় যমজ সন্তান পৃথিবীতে আনে। বাবা মার্মোসেটরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসার যাপন ও সন্তান পালনে সাহায্য করে স্ত্রীদের। বাবাদের তত্ত্বাবধানেই রোজের খাওয়ার মেলে নবজাতকদের।
সমস্ত জীবন শৈলীর মধ্যেই এক সহজাত বুদ্ধিমত্তার ছাপ আছে। আকার ও উচ্চতা এদের কাছে তুচ্ছ সমস্যা। বুদ্ধির জোরে নিজের জমি খুঁজে নিয়েছে নিজেরাই। এরই আরেক নাম লড়াই। এখন লড়াই আর শুধু প্রকৃতি পর্যন্ত থেমে নেই। শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে চোরা চালানকারীদের। এদের মজাদার স্বভাবের জন্য পশ্চিমের অনেক দেশে এরা গৃহপালিত হিসাবেও সমাদৃত।
ফি বছরেই ব্রাজিল ও বলিভিয়া থেকে প্রচুর সংখ্যায় পাচার হচ্ছে মার্মোসেটরা। খোদ এই বঙ্গেই গত বছর খবরের শিরোনামে এসেছিল এরকমই এক চালানকারীর হদিশ। কে বলতে পারে হয়ত এদেরই কেউ আগামীতে রাইজ অফ্ দ্য প্ল্যানেট অফ্ দ্য এপস ছবির মত শহুরে সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়বে না - তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে।