এনজেপি স্টেশন থেকে গাড়িতে মানেভঞ্জন। সেখান থেকে সান্দাকফু যাওয়ার পথের মাত্র ৩ কিমি গেলেই ভারত আর নেপাল সীমান্তে ছবির মতো সুন্দর গ্রামের দেখা মিলবে - নাম, চিত্রে। উচ্চতা ৮,৩৪০ ফুট। গ্রাম মানে সেখানে আছে গুটি কতক বাড়ি। আর এখানেই সন্ধান পাওয়া যাবে একটা ছোট্ট তিব্বতের। ছবির মতো সুন্দর গ্রামটা কিন্তু আছে আমাদেরই রাজ্যে।
কিন্তু এই ছোট্ট গ্রামটির সাথে তিব্বতের সংযোগ কোথায় ??? আজ, সেই গপ্পই হোক। ১৯৬০ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় তিব্বত থেকে ছিন্নমূল হয়ে নামগিয়াল ভুটিয়া প্রথম তাঁর পরিবার নিয়ে এসে বাসা বাঁধেন এইখানে। তারপর, একে একে আরো চারটি পরিবার এসে গড়ে তোলেন ছোট্ট এক তিব্বতি মহল্লা। ধীরে ধীরে এখানেই তৈরি হয় বিখ্যাত তিব্বতি গুম্ফা এবং স্কুল। দার্জিলিং, কালিম্পঙের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বৌদ্ধ সন্তানরা কঠিন সংযম, তপস্যার মাধ্যমে জীবনবোধের পাঠ নিতে আসে এখানে। তাদের সূর্যের আলো দেখাও বারণ। বোঝা যাবে না, এই গুম্ফাতেই পাঠ নেয় শ-তিনেক কিশোর। যাদের অনেকেই ভবিষ্যতের লামা। অনেকে অবশ্য উচ্চ শিক্ষার জন্য নিজেদের তৈরী করেন। এই গ্রামে রাত কাটালেই দেখা মিলবে এদের।
চিত্রেয় এখন সাকুল্যে পাঁচটি পরিবারের বাস। তাদের মধ্যে চারটিই তিব্বত থেকে আসা। সান্দাকফুর দিকে আরো খানিক এগোলে মেঘমা। সেখানেও দুটি তিব্বতি পরিবারের বাসা। চিত্রেতে একটা গোটা দিন কাটালেই তিব্বতের ছোঁয়া পাবেন। তা দেবে ফিনজো, জিগমে, ডোমারা। ছোট্ট তিব্বতের জনক নামগিয়াল ভুটিয়ার পুত্র ফিনজো বিখ্যাত তার হোম-স্টের জন্য। জিগমে পেশাগতভাবে সান্দাকফু-ফালুট-চিন্তাফু রুটের লোকাল গাইড।
আর আছে, সক্কলের প্রিয় আন্তরিক ‘বহিনু’ ডোমা। এই উপত্যকায় একাই ফাটাফাটি চা, ডিম-টোস্ট, নুডলস, মোমো এমনকি চাইনিজ খাবারের একটি ছোট্ট রেস্তোরাঁ চালায় সে। তার মিষ্টি হাসি ও সারল্য ওই পাহাড়ি পরিবেশেও আপনাকে এনার্জাইস করবে।
চিত্রে থেকে স্পষ্ট দৃষ্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা মন ভালো করবেই। দেখা মিলবে হেরিটেজ গাড়ি -বুড়ো ল্যান্ড রোভারেরও। এখান থেকে ৭ কিমি দূরেই সিংগালিলা ন্যাশনাল পার্কের গেট। আর চিত্রের দু’পাশে ছড়ানো গুরাস (রডোডেনড্রন) আর রানি চাঁপ (ম্যাগনোলিয়া) গাছ। বসন্তে যখন ফুল আসে এইসব গাছে, চিত্রে তখন পরির দেশ। আর এই ছবি প্রত্যক্ষ করতে, কিছুটা অক্সিজেনের সন্ধানে ঘুরে আসতেই পারেন চিত্রে।