ডালহৌসি থেকে ইন্ডিয়ান এক্সচেঞ্জ প্লেস হয়ে মিলেনিয়াম পার্ক, যেদিকেই আপনি যান না কেন চোখে পড়বে অফিস পাড়ার ব্যস্ততা। কিন্তু যতই ব্যস্ততা থাক, অতি বড়ো নিন্দুকও এ পাড়াকে কোনওদিনই শুধুমাত্র ‘কেজো পাড়া’ বলবে না। ১০ অফিস পাড়ার আকর্ষণ এ পাড়ার খাবার-দাবার আর গপ্পো। দুপুর এগারোটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়। সেই দৌড়ে সামিল হয় আশপাশের ফুটপাতের ধারে খাবারের স্টল আর হোটেলগুলোও। হেঁশেল যেন তাদের দ্রৌপদীর হেঁশেল। এক একটা হেঁশেলের এক একরকম গল্প। তেমনি এক গল্প মমতার।
অফিস পাড়ার নতুন আকর্ষণ ‘মমতা’। আজকাল লোকজন এক ডাকে চিনে গিয়েছে অফিস পাড়ায় ‘মমতার পাইস হোটেল’। নাম শুনলে মনে হবে এ বুঝি তিরিশ দশকের কাহিনি। তখন সবে পাইস হোটেলের জন্ম হয়েছে কলকাতায়। কিন্তু ভুল ভাঙে এই হোটেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে।
জিন্স-টপ, কানে ইয়ার প্লাগ ঝকঝকে এক তরুণী চটপটে হাতে ব্যস্ততা সামলাচ্ছেন হোটেলের। ভাত-ডাল-ঝোল-মাছে পুরোদস্তুর ভাতের হোটেল। দুপুর জুড়ে লেগেই থাকে ভিড়। ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যান মমতা। এক মুহূর্ত স্থির নেই।
পুরো নাম মমতা গঙ্গোপাধ্যায়। হোটেল ম্যানেজমেন্টের পাঠ শেষ করে চাকরি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন গুজরাত। সব ওলোটপালট করে দেয় করোনা আর লকডাউন।
এই হোটেল সামলাতেন মমতার বাবা-মা। তাঁদের সাহায্যের দরকার ছিল তাই কন্যা তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। শুরুতে শুধুই কাজে সাহায্য, তাঁর হোটেল ম্যানেজমেন্টের পাঠ কিছুটা কাজে লেগে যায় এক্ষেত্রে। পরে তাঁর কাঁধেই সব ভার। তবে এই ভার কিন্তু মোটেই ভার নয় মমতার কাছে।
বেলেঘাটা থেকে বেশ সকালে চলে আসেন অফিসপাড়ায়। বাজার থেকে রান্না সবটা করেন বাবা। মমতার মা তাঁকে সাহায্য করেন। ক্রেতা সামলানো আর পরিবেশনের দায়িত্ব মমতার।
লকডাইন আর করোনা বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। শিখিয়েছে জীবন। চিনিয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। মমতার লড়াইটাও অনেকটা সেরকমই। অনেক মিথ একসঙ্গে ভেঙেছেন তিনি। অফিসপাড়ায় এ যেন এক অন্য লড়াইয়ের গল্প।
মমতাকে যারা সামনে থেকে প্রতিদিন দেখেন, এই হোটেলে যাদের নিত্য আসাযাওয়া তাঁদের চোখেও মমতা অন্যরকম। ঝরঝরে ব্যবহার আর হাসি বাধ্য করবেই একবার এই হোটেল থেকে ঘুরে যাওয়ার। ট্রেন্ড মমতা সে কথাই বলছে! প্রতি সেকেন্ডে নেট দুনিয়ায় ঝড়ের বেগে ভাইরাল হচ্ছেন অফিস পাড়ার মমতা!