আগ্রা শাহজাহানের। আগ্রা মমতাজের। আগ্রা তাজমহলের। কিন্তু আগ্রা নগরী আরও একটি জিনিসের জন্য ভুবন বিখ্যাত। বিশেষ করে ভাল বেড়ানোর সঙ্গে ভাল ভোজনেও যাদের সমান টান তাদের কাছে, আগ্রা-ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়, পেঠা ছাড়া।
ট্রেনে চেপে আগ্রার দিকে গেলে, তাজমহল নগরী যে কাছাকাছি এসে পড়েছে তা বোঝা যায় পেঠাওয়ালার ডাকে। ট্রে ভর্তি কড়কড়ে চিনি চোবানো পেঠার ডাক উপেক্ষা করা কঠিন। আগ্রা স্টেশনে পা দিলেও ছবিটা আরও স্পষ্ট। সেখানেও আদুরে এই মিঠাইয়ের হাঁকডাক।
পেঠা সম্রাট শাহজাহানের প্রিয় মিষ্টি। বাকি দেশের কাছে পেঠার একাধিক নাম আছে। কোথাও মোরব্বা, কোথাও আবার কুমড়ি। চাল কুমড়ো বা সাদা কুমড়ো থেকে তৈরি হয় বলেই এমন নামকরণ।
পেঠার জন্মও নিয়েও একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। শোনা যায় একবার নাকি সম্রাট শাহজাহান শ্বেত পাথরের স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। মুঘল রসুইখানার প্রধান রসুইয়ের কাছে এ ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সম্রাটের ইচ্ছের কদর করতে গিয়েই তৈরি হয় পেঠা। সামান্য লাউ থেকে জন্ম নেয় পৃথিবী বিখ্যাত মিঠাই।
পেঠার মূল এবং প্রধান উপকরণও সাদা কুমড়োই। সঙ্গে চিনি। আর তাতে বসিয়ে পাক। এই তিনের মিশেলেই জন্ম নেয় পেঠা। তবে শুধু মাত্র কয়লার আঁচেই বানাবার নিয়ম। কোনও রাসয়নিক বা ‘আর্টিফিশিয়াল’ উপকরণ ব্যবহার হয় না। শুধুমাত্র এই কারণে পৃথিবীর অন্যতম সেরা ‘শুদ্ধ মিষ্টি’র তকমা পেয়েছে। আগ্রার পেঠা জিআই তকমা পেয়ে গিয়েছে বছর কয়েক আগে।
আগ্রার সদর বাজার, নূরী গেট, জুহরী বাজার অঞ্চলে শেঠ গলি, সদর বাজার ঘাট গলি, শাহ মার্কেট পেঠার টানে পর্যটকরা আসেন। তবে পাঞ্চির পেঠা সবচেয়ে জনপ্রিয়।
পেঠা নাকি এক সময় মুঘল বাদশাহের হেঁশেলেও রওনা দিত এখান থেকে। সময়ের দাবীতে বদলে গিয়েছে পেঠাও। সাদা কুমড়োর পাশাপাশি আঙুর, কেশর, চকলেট, পান, চেরি, আনারস, নারকেলের মতো ২৫ ধরনের পেঠা মেলে। তবে গন্ধে যতই বদল আসুক তৈরির ঐতিহ্যে এতটুকু বদল আনেননি কারিগররা।