স্কুলের খাতায় কলমে তার পদ পিওনের| কাজ চা-জল দেওয়া, স্কুলের ছুটিতে ঘন্টা বাজানো আবার শিক্ষকদের খাতা পত্র বা নথি পৌঁছে দেওয়া| কিন্তু হরিয়ানার এই স্কুলের পিওনকে মাঝে মাঝে হাতে মোটা বই নিয়ে দেখা যায় অঙ্কের বা ফিজিক্সের ক্লাসে | স্কুলে পিওনের কাজ সামলাবার ফাঁকেই উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের অঙ্ক-ফিজিক্স-এর সমস্যা সমাধান করতে দেখা যায় হরিয়ানায় অম্বালার কাছে মাজরি গ্রামের গভর্নমেন্ট সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের পিওন কমল সিংহকে|
কিভাবে শুরু হলো তাঁর এই জার্নি| পেশায় হাইস্কুলের পিওন কমল একদিন স্কুলে গিয়ে দেখেন স্কুলের একমাত্র অঙ্কের শিক্ষক অনুপস্থিত| স্কুলের নবম দশম শ্রেনীর অঙ্কের ক্লাস সেদিন পুরোপুরি বন্ধ| বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে সটান তিনি স্কুলের প্রিন্সিপালের কাছে চলে যান| প্রিন্সিপালকে আর্জি জানান, সেদিনের নবম শ্রেণির ফিজিক্স ও অঙ্ক ক্লাস তিনি নিতে চান| কমলের এই আবেদন মঞ্জুর করেন প্রিন্সিপাল নিজে| কারণ তিনি জানতেন কমল একজন মেধাবী ছাত্র| কমল ফিজিক্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী|
তাই সেদিনের বন্ধ হতে বসা ক্লাস চালু হয় কমলের হাত ধরে| তবে সেদিনেই বিষয়টির ইতি হয়ে যায়নি| কমলের পড়ানোয় বেজায় খুশি ছাত্রছাত্রীরা|নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা ‘কমল স্যর’এর ক্লাস করার জন্য নিজেরাই আবেদন জানায় স্কুলের প্রিন্সিপালকে|
কমলের জনপ্রিয়তাকে পরীক্ষা করে দেখতে নিজে তারপর দিন দশম শ্রেনীর ক্লাসে হাজির থেকে কমলের পড়ানোর দক্ষতা ও বিষয়ের প্রতি জ্ঞান দেখে অবাক হয়ে যান প্রিন্সিপালও| এরপর স্কুলের একমাত্র অঙ্কের শিক্ষকের চাপ কমাতে কমলকে সপ্তাহে ১৭-১৮টা ক্লাসের ভার দেওয়া হয়| এই বিষয়টি সে রাজ্যের শিক্ষাবিভাগের নজরে আনার পর হরিয়ানার ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট এডুকেশন অফিসার সুধীর কালরার জানান, কমলের যা যোগ্যতা রয়েছে তাতে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের পড়ানোই কোনো বাধা নেই| স্কুলের পরিকাঠামোগত অভাব থাকায় মানবিক কারণে কোন ক্লাসে পড়ানো নিয়ে কোনো বাধা নেই শিক্ষা দফতরের বলে জানিয়েছেন তিনি|