দু-এক টাকা নয়, নিকাশি পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা। এবার থেকে গঙ্গায় দূষিত জল ফেললে গুণতে হতে পারে মোটা অঙ্কের জরিমানা। যে এলাকায় এই ঘটনা ঘটবে, সেখানকার পুরসভাকে মেটাতে হবে মূল্য। তবে এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের নয়, গঙ্গা দূষণমুক্ত করতে অভিনব উদ্যোগটি নিয়েছে জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনাল, যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। কারণ, ইতিমধ্যেই পুরসভাকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। আদি গঙ্গার দূষণ সংক্রান্ত গাফিলতিতে জরিমানার নির্দেশিকা এসে পৌঁছেছে দিন দশেক আগে।
দু’দিন আগে গঙ্গা সংলগ্ন ৪১টি পুরসভাকে নিয়ে বৈঠক করে এ বিষয়ে সতর্কবাণী জারি করেছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদ। পূজোর মরশুমে এই দূষণ সমস্যা আরও প্রকট হবে বলেই মনে করছেন পর্ষদাধিকারিকরা, যার ফলে পুজোর আগেই তড়িঘড়ি সতর্কতা জারি করেছেন তাঁরা। রাজ্যের অন্যান্য যে সব পুরসভাগুলির জল গঙ্গায় মেশে, তা নিয়ে আর কোনোরকম গা ছাড়া মনোভাব দেখাতে রাজি নন তাঁরা। এ বিষয়েও নির্দেশিকা পাঠিয়েছে জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনাল। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পর্ষদের পক্ষ থেকে ৩১শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে এতকিছুর পরেও এই ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দিহান সকল পক্ষ।
পর্ষদ চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানিয়েছেন, পুরসভাগুলির সাথে বৈঠক করে সমস্ত বিষয় বোঝানো হয়েছে, এবার তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদিও প্রশ্ন উঠছে পরিকাঠামো নিয়ে। গঙ্গার দু’পাড়ে বিশেষত হুগলী ও উত্তর চব্বিশ পরগনার শিল্পাঞ্চলের নিকাশি জল সবচেয়ে দূষিত। চটকল থেকে শুরু করে ছোটো বড় কারখানার প্রায় সবই রয়েছে এই দুই জেলায়, বিশেষত গঙ্গার পাড়ে। এর মধ্যে পড়ছে হাওড়া, উলুবেড়িয়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বজবজ। এ ছাড়া নদীয়া, বর্ধমান, মালদহ, মুর্শিদাবাদের পুরসভাগুলিও রয়েছে এই তালিকায়। এই জেলাগুলির শতাধিক নিকাশি সরাসরি গিয়ে মিশছে গঙ্গায়। যেমন ভদ্রেশ্বরের ছয়টি নিকাশি গিয়ে পড়ছে গঙ্গায়। তাদের জলে বিপজ্জনক মাত্রায় রাসায়নিক, ক্লোরিন ও বিভিন্ন রঙ থাকায় অচিরেই বদলে যাচ্ছে গঙ্গার জলের রঙ।
যারা নিয়মিত গঙ্গা স্নান করেন বা মাছ ধরেন, তাদের চর্মরোগের কারণ হয়ে উঠছে গঙ্গার জল। মানুষের পাশাপাশি বিপদসীমায় অবস্থান করছে নদীর মৎস্যকূল। ফলে বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে উদ্বেগ দেখা গিয়েছে। গ্রিন ট্রাইবুনালও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে। এই মাস থেকেই তা কার্যকর হবে বলে জানা যাচ্ছে। বৈঠকে অধিকাংশ পুরসভা জানিয়ে দিয়েছে এত দ্রুত কিছু করা সম্ভব নয়, তবে ন্যাশনাল ট্রাইবুনালও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, ফলে জটিলতা গিয়ে ঠেকেছে চরমে। নিকাশি জলের উপর নিয়ন্ত্রণের পরিকাঠামোই নেই অধিকাংশ পুরসভার। নিকাশি নালায় ছাঁকনি বসানো বা সরাসরি রাসায়নিক মিশ্রিত জল আটকানোর কোনো উপায় না থাকায় কার্যত বেকায়দায় পুরসভা মহল।
যদিও ২৪ পরগণার অধিকাংশ পুরসভা ইতিমধ্যেই এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করে দিয়েছে। তার উপর সামনেই পুজো। এ সময় দূষণের মাত্রা থাকে আকাশছোঁয়া। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনালের এই ঘোষণায় নিঃসন্দেহে বিপাকে ৪১টি পুরসভা। রাত পোহালেই শুরু অগ্নিপরীক্ষা।