শিক্ষক দিবসে শিক্ষকতাকে এক শিক্ষিকার নিবেদন

নমস্কার শিক্ষকতা,

প্রথমেই প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানাই সেই মানুষটিকে যার কারণে আজকের দিনটি "শিক্ষক দিবস" রূপে নির্ধারিত হয়েছে... সেই ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনকে... যার জন্মদিন আজ, ৫ই সেপ্টেম্বর। তারপর শ্রদ্ধা ও নমস্কার জানাই আপনাকে অর্থাৎ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সম্মানজনক পেশাটিকে এবং আপনাকেই যারা জীবিকা নির্বাহের পন্থা হিসেবে গ্ৰহন করেছেন... সেই শিক্ষকদের।

আজ বেশ কিছু বছর হয়ে গেলো আমি আপনার অনুসারী। অর্থাৎ কিনা আপনাকেই জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছি। আজ আমার দিন, বা আপনার দিন... অর্থাৎ কিনা শিক্ষক দিবস। ভাবা যায়, শুধুমাত্র আপনাকে যেসব মানুষরা পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন তাঁদের সম্মান প্রদর্শন করার জন্য আস্ত একটা দিন!

কেন আমি শিক্ষক হলাম!...
সত্যিই তো, এটা একটা ভেবে দেখার বিষয়। কেন একজন মানুষ শিক্ষকতার পেশায় আসেন সেটা তো সেরকম ভাবে ভেবে দেখিনি কখনো। আজ, শিক্ষকদিবসে বরং এটাই পর্যালোচনা করে দেখা যাক...

একেবারে ছোট বেলায় যখন স্কুলে পড়তাম তখন দিদিমনিদের দেখে মনে হতো পৃথিবীতে তাঁদের চেয়ে ক্ষমতাশালী আর কেউ নেই। গম্ভীর মুখে ক্লাসে আসছেন, পড়াচ্ছেন, যাকে ইচ্ছে শাস্তি দিচ্ছেন... সে এক দারুণ আকর্ষণীয় ব্যাপার। আর তাদের সম্মানও বিরাট। বাড়িতেও দেখতাম একই ঘটনা। যে দিদিমনি বা স্যার বাড়িতে আমাদের পড়াতে আসতেন তার কী খাতির! যেই মা আমাদের সারাক্ষণ বকাবকি করছে সেই মা ই দিদিমনির সঙ্গে কী মধুর স্বরে হেসে হেসে কথা বলছে... আমার বিস্ময়ের সীমা থাকতো না। তার মানে দিদিমনি হতে পারলে আর কেউ বকবে তো না ই... উল্টে সবাই আমার সঙ্গে সুন্দর করে কথা বলবে .... এই ভাবনাটা আমাকে আপনার প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছিল অর্থাৎ শিক্ষক হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল। শৈশবে বাড়িতে টিচার টিচার খেলে নি এমন বালিকা বোধহয় সারা পৃথিবীতে বিরল।

তারপর যখন বড়ো হলাম, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার একটা তাগিদ অনুভব করলাম তখন ভেবে দেখলাম আমি যদি শিক্ষিকা হই তাহলে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, অর্থ এবং সম্মানের সঙ্গে সঙ্গে আরো একটা জিনিস পেতে পারি সেটা হচ্ছে শিশু থেকে কিশোর কিশোরী... এই বয়সের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটানোর সুযোগ। আর যে মূল্যবোধ বা চিন্তাধারা নিয়ে বড়ো হয়েছি... সেগুলো তাদের মধ্যে সঞ্চারিত করে দেওয়া, পড়াশুনা করানোর পাশাপাশি একটু একটু করে ঠিকভুল, সৎঅসৎ, ভালো - মন্দ সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করে দেওয়া... এই সুযোগগুলোও পাওয়া সম্ভব। এই সব কারণের জন্য খুব সচেতনভাবে আপনাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি হে মহান শিক্ষকতা।

একটুখানি ব্যক্তিগত কথা বলি? আমাদের বাড়িতে জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখেছি দাদু শিক্ষক, পিসিরা শিক্ষক, বাবা বা দাদুর কাছে শুনেছি আমার উর্ধ্বতন পাঁচ পুরুষ ও শিক্ষকই ছিলেন। চিরদিন শুনেছি "শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর"...
তাই কীভাবে যেন এটা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল যে আমি ও "মানুষ" গড়বো অর্থাৎ শিক্ষিকাই হবো।

জানেন, আজ চারদিকে যখন দেখি একটা অস্থিরতা চলছে, মানুষ বিভ্রান্ত... তখনও মনে হয় আমরা, শিক্ষকরাই পারবো আগামী প্রজন্মকে সঠিক পথে চালনা করতে। তাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে... ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীদের প্রাণে "আগুনের পরশমনি" ছোঁয়াতে...

 

                                                                                                            প্রণাম নেবেন ।..ইতি

                                                                                                        শিক্ষক সমাজের এক প্রতিনিধি।।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...