দুর্গাপুজোর উত্তর কলকাতা আর কালী পুজোর উত্তর কলকাতার মধ্যে তফাৎ অনেক। দীপান্বিতা উৎসবেও উত্তর আপন জৌলসে চোখ টেনে নেয়। নিমতলা ঘাট স্ট্রিট, পাথুরিয়া ঘাটা, বিকে পাল অ্যাভিনিউ অঞ্চলে যাদের যাতায়াত তাঁদের অবধারিতভাবে চোখ পড়বেই রাস্তার ওপর এক গ্যারেজ সদৃশ্য পরিসরে।
একটু একটু করে গড়ে উঠছেন বিশাল মাপের শ্যামা মা। দেবীর গড়ন আর তাঁর স্থানটি বলে দেয় এই পুজোর অস্তিত্ব। দেবী প্রতিমার সঙ্গেই মানানসই তাঁর মাথার ওপরের ঝাড়বাতিটিও।
এই দেবী উত্তরের ‘বড় কালী’। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে অতুলনীয়া। লোকমুখে এই পুজোর পরিচিতি ‘বাঘা যতীনের পুজো’ নামে। বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় উত্তর কলকাতার পাথুরিয়া ঘাটায় ১৯২৮ সালে এই পুজোর সূচনা করেন। যদিও পুজোর বয়স নিয়ে বেশ দ্বিধা দ্বন্দ্বই রয়েছে।
পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতির প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী বাঘাযতীন। অতুলকৃষ্ণ ঘোষ ও বাঘাযতীন মিলে তৈরি করেন এই সমিতি। পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতি সে যুগে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গোপন ঘাঁটি।
১৯০৮ সালে প্রথম বাঘাযতীন এখানে কালীপুজোর আয়োজন করেন। কিন্তু এরপর থেকেই আলিপুর বোমা মামলা সহ আরও একাধিক মামলায় ব্রিটিশ সরকার অনুশীলন সমিতি বন্ধ করে দেয়। তবে গোপনে বিপ্লবীদের নানা বৈঠক বা কর্মসূচী চলতে থাকলেও অনুশীলন সমিতি বা পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতির তত্ত্বাবধানে প্রকাশ্যে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পুজোও। ১৯১৫ সালে মৃত্যু হয় বাঘাযতীনের। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ফের অতুল কৃষ্ণ ঘোষ ২৯২৮ সালে কালীপুজো শুরু করেন।
১৯৩০ সালে এই পুজোর সভাপতিত্ব করেন নেতাজি। কলকাতার সবচেয়ে প্রাচীন বারোয়ারি কালীপুজো এটি। মায়ের ৬ ফুটের রুপোর খাঁড়া দান করেছিলেন নরেণ পোদ্দার।
আজও এই পুজোর রীতিতে এতটুকু মেনে পুজোর দিন আড়াই ফুটের একটি রুপোর মঙ্গলঘটে করে গঙ্গা থেকে জল আনা হয়। বিসর্জনের দিন পুরুষ মহিলারা ধুতি-পাঞ্জাবি ও আটপৌরে লালপেড়ে সাদা শাড়ির সাবেকি পোশাকে পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। তবে পাথুরিয়াঘাটার সব থেকে নজরকাড়া বিষয়টি হল অন্নকূট।