জৈন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব পর্যুশন। শ্বেতাম্বর এবং দিগম্বর দুই সম্প্রদায়ের মানুষরাই এই উৎসব পালন করেন। হিন্দি ক্যালেন্ডারের ভাদ্রপদ মাসের শুক্ল পক্ষে পালন করা হয়।
জৈন সন্ন্যাসীদের বিশ্রাম কালের সূচনা হয় এই উৎসবের মাধ্যমে। শ্বেতাম্বর সম্প্রদায় এই উৎসব আট দিন ধরে পালন করেন। আর দিগম্বর সম্প্রদায় এই উৎসব পালন করেন দশ দিন ধরে।
এই উৎসব আত্মশুদ্ধির উৎসব। ক্ষমা এবং প্রেমের দ্বারা নিজের অন্তরকে শুদ্ধ করে তোলা।
বর্ষা ঋতুতে যেমন শুদ্ধ এবং স্নাত হয়ে ওঠে পৃথিবী তেমনি ক্ষমা দিয়ে শুদ্ধ হয়ে ওঠে অন্তর।
পর্যুশন শব্দের অর্থ ‘এক সঙ্গে বাস’। এই সময় জৈন সন্ন্যাসীরা একত্রিত হন। উপবাস করেন।
পর্যুশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রতিদিনের ধ্যান এবং প্রার্থনা। তীর্থঙ্করের বানী এবং দর্শন চর্চা করা হয়।
পর্যুশনের চতুর্থ দিনে শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ের মানুষ মূর্তিপূজন করেন এবং কল্পসূত্র পাঠ করা হয়। কল্পসূত্রে মহাবীরের জন্ম, জীবন, বাণী এবং মত বর্ণিত আছে। দিগম্বররা তৎব্রতসূত্র পাঠ করেন। শোভাযাত্রা বের হয়।
আলু, পেঁয়াজ, রসুন খাওয়া নিষিদ্ধ। যে ধরনের সবজি বা ফসলে পুরো গাছ বিনষ্ট হয় সেই ধরনের নিরামিষ খাবারেও বিধিবারণ মানা হয়।
পর্যুশনের শেষ দিন ‘সম্ভৎসরী পরিক্রমণ’। এই দিনটি আসলে জৈন সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে ‘স্বীকারোক্তির’ দিন। একে অপরের কাছে জানায়- অজানায় যদি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে থাকে এবং কেউ দুঃখ পেয়ে থাকে তার জন্য একে পরস্পরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। এই ক্ষমাপ্রার্থনা প্রকৃতি, পৃথিবী, মানুষ সকলের কাছেই।
শান্তি, মৈত্রী এবং প্রেমের বার্তা দেওয়াই এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। ‘নান মাল্যিপ্রজ্ঞা’য় উপবাস চলে। ফল গ্রহণের বিধিও নেই। উৎসব চলাকালীন সময়ে জৈন ধর্মাবলম্বীরা দশটি আবশ্যিক গুণ যাতে তাঁদের জীবনযাপনে প্রতিফলিত হয় নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালনের প্রচেষ্টা করেন। জৈন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন অহিংসা ও আত্ম-সংযম হল মোক্ষ এবং জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তিলাভের পন্থা। পূজা বা প্রার্থনার উদ্দেশ্য হল জাগতিক কামনা ও বন্ধনকে ধ্বংস করা এবং আত্মার মোক্ষ অর্জন।