মহারাষ্ট্রের রত্নগিরির কাছে চিপলুনে অবস্থিত পরশুরাম মন্দির। এই মন্দির অঞ্চল শ্রী ক্ষেত্র পরশুরাম নামেও পরিচিত। কোঙ্কন উপকূলে পযর্টকরা আসেন এই তীর্থ ক্ষেত্রটি দর্শনের জন্য।
ভগবান শ্রী বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। তাঁর নামের অর্থ কুঠার হাতে রাম। স্থানীয় বিশ্বাস কোঙ্কন উপকূলের দেবতা পরশুরাম। তিনি এই উপকূল ভূমিকে সমুদ্রের গ্রাস থেকে রক্ষা করেন। অতীতে জাঞ্জিরেকর এবং শিড্ডির অর্থানুকুল্যে পর্তুগীজরা এই মন্দির নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময়ে পরমেশ্বর ব্রহ্মেন্দ্র এই মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন।
পরশুরাম ছিলেন ব্রহ্মক্ষত্রিয়। প্রথম ঋষি যিনি শস্ত্র বিদ্যায় ক্ষত্রিয়ত্ব অর্জন করেছিলেন। পরশুরাম একুশবার পৃথিবীকে ক্ষত্রিয়শূন্য করেন। ক্ষত্রিয়দের হত্যা করে পরশুরাম তাদের রক্ত দিয়ে পাঁচটি হ্রদ তৈরি করেন। পরে অনুশোচনায় পিতৃপুরুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। পরশুরাম ক্ষত্রিয় হত্যার পাপ থেকে মুক্ত হলে এই পাঁচটি রক্ত হ্রদ কুরুক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
গোটা পৃথিবীর অধীশ্বর হয়েছিলেন তিনি। তারপর অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। সেই যজ্ঞে মর্ত্যের সমস্ত মুনি-ঋষিরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কাশপ্য মুনিও। যজ্ঞ সমাপ্ত হলে পরশুরাম ব্রাহ্মণদের দক্ষিণা দিতে যান। তখন মহর্ষি কাশ্যপ তাঁর কাছে অর্জিত মেদিনী চান। পরশুরাম মেনে নেন।
মহেন্দ্রগিরি পর্বতে বাস শুরু করেন সর্বত্যাগী পরশুরাম। মনে করা হয় সেই স্থানেই গড়ে উঠেছে রত্নগিরির পরশুরাম মন্দির। মানুষের বিশ্বাস, প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সময় পরশুরাম হিমালয় যাত্রা করেন আর সূর্য অস্ত গেলে তিনি আবার এই মন্দিরেই ফিরে আসেন।
হিন্দু ও ইসলাম দুই স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠেছে এই মন্দির। মূল মন্দিরের প্রাচীর গড়ে উঠেছে পাথরে। কাল, কাম আর পরশুরাম এই তিন দেবতা পূজিত হন। ৩০০ বছর আগে ব্রহ্মেন্দ্র স্বামী এই মূর্তি স্থাপন করেছিলেন।
মন্দিরে শ্রী পরশুরামের শয্যা এবং পাদুকা স্থাপিত াছে। পরশুরাম মন্দিরের ঠিক পিছনে রেনুকা দেবীর মন্দির। মন্দির অঞ্চলের বন্দগঙ্গা হ্রদ পরশুরামের পাঁচ তূনের নিশানায় সৃষ্টি হয়েছিল।
প্রতিদিন সকাল ৬ টায় খুলে যায় মন্দিরের দরজা। বন্ধ হয় রাত ৮ টায়। প্রতিবছর অক্ষয় তৃতীয়ায় পরশুরাম জয়ন্তীতে হয় উৎস্ব। দেশ বিদেশ থেকে ভক্তরা আসে চিপলুনে।