গহনা মানেই যে বিভিন্ন ধাতুর তৈরী হবে সে দিন গেছে। সোনা, রূপা ছাড়াও অন্যান্য ধাতুর তৈরী কস্টিউম জুয়েলারির চল প্রায় সর্বত্র। সোনা ও রূপার গহনা যেমন ঐতিহ্য ও আভিজাত্যেকে প্রকাশ করে ঠিক তেমনি কস্টিউম জুয়েলারির চাহিদাও পার্টি থেকে শুরু করে গেট টুগেদারের ক্ষেত্রে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু দেখতে গেলে এই সকল ধাতব অলংকারকে টেক্কা দিয়ে রমরমিয়ে বাজার কিনছে ‘কুইলিং পেপার জুয়েলারি’। কাগজের তৈরী এই গহনা গুলি যেমন দেখতে সুন্দর ঠিক তেমনি হালকা ওজন হওয়ায় ব্যবহারেও বেশ উপযোগী। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে চটজলদি মেকওভারের জন্য কাগজের এই কুইলিং জুয়েলারির জুড়ি নেই।
স্বল্প মূল্যের এই কুইলিং জুয়েলারির মধ্যে আছে শিল্পীর দক্ষ হাতের কাজ। রঙ বেরঙের অলংকারের মধ্যে আছে বিভিন্ন ডিজাইনের সম্ভার। দৈনিক সাজগোজের ক্ষেত্রে পোশাকের সাথে এক্সেসরিজ-এর রঙ মানানসই হতে গেলে কুইলিং পেপার জুয়েলারির বিকল্প হয় না।
পরিকল্পনাটি নতুন হলেও কুইলিং শিল্প বহু পুরানো। কুইলিং এর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ১৬-১৭ শতকের দিকে ফ্রান্স এবং ইতালির নান-রা এর ব্যবহার করত। কুইলিং এর আদিম ব্যবহার হত মিশরে। ইউরোপেও কিছু জায়গায় এর প্রচলন ছিল। নান-রা বিভিন্ন বইয়ের ধার সোনালী রঙ করে বাঁধিয়ে তার ঊপর কুইলিং এর কারুকার্য করতেন আবার পৌরাণিক দর্শণের বই ও পবিত্র ছবি সু-সজ্জিত করে বাঁধানোর ক্ষেত্রে কুইলিং এর ব্যবহার চলতো। পরবর্তী কালে উন্নতমানের কাগজের উৎপাদনের সাথে সাথে ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। যদিও দেখতে গেলে কুইলিং হল সোনালী ও রূপালী তারের কারুকার্যের এক রকম অনুকরণ।
পেপার রোলের মধ্যে একটি পদ্ধতি হল কুইলিং। একটি সরু দীর্ঘ কাগজকে কুইলিং পিনের সাহায্যে রোল করে তাকে গোল, চৌকো, ত্রিকোণ, গাছের পাতা, হার্ট, চোখ ও অন্যান্য আরো আকৃতি দেওয়া হয়। এ তো গেল কুইলিং পেপার ব্যবহারের প্রণালী। সম্প্রতি কুইলিং পেপার থেকে কার্ড, ফটো ফ্রেম, দেওয়াল বা বইতে কারুকার্য করা ছাড়াও অলংকার তৈরীর ক্ষেত্রেও বেশ উপযোগী হয়ে উঠেছে।
শুধু সজ্জার বস্তু হিসাবেই নয় পাশাপাশি পরিবেশ সুন্দর ও সুস্থ রাখতে কুইলিং পেপারের গহনা অন্যতম। এক্ষেত্রে ধাতুর গহনার মতন তৈরীর সময় কোনরকম পরিবেশে দূষণ হয় না। অর্থাৎ সব দিক থেকে দেখতে গেলে মেকওভারের পাশাপাশি ইকো ফ্রেন্ডলি অলংকার হিসাবে কাজ করে এই কুইলিং পেপার জুয়েলারি।