পণ্ডিত ভীমসেন যোশিঃ এক অসম্ভবের কাহিনি

বাড়ির পাশেই মসজিদ। ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যেত আজানের সুরে। ভোরের আলো-অন্ধকারে সেই সুর আর ঘুমতে দিত না। সেই রেশ ফিকে হতে না হতেই কানে ভেসে আসত ভজন। বাড়ির সামনে দিয়ে যেত ভজনের দল। কৃষ্ণ-মীরা একাকার সেই গানে। একাকার হয়ে যেত কর্ণাটকের ধারাওয়াত জেলার স্কুল শিক্ষক গুরুরাজ যোশির শিশুপুত্রটিও।

গুরুরাজ যোশির প্রথম সন্তান। ভীমসেন যোশি। শুরু থেকেই খুব অন্যরকম। সারাদিন গানের খেলায় মেতে। আনমনে চলে গুনগুন। গেয়েও উঠত এক এক দিন। কেমন যেন নেশা লেগে গেল গানের। যত্রতত্র গানের টানেই ছুটে চলে ওইটুকু ছেলে।  ভাই-বোন মিলিয়ে ষোলজন। সবার বড় দাদা তিনি। ছোটবেলাতেই মাকে হারাতে হয়। বিমাতার কাছে বড় হয়ে ওঠা।

একবার তো খোঁজ না পেয়ে পুলিশে খবর পর্যন্ত দিতে হয়েছিল। গানের দলের সঙ্গে ভিড়ে চলে গিয়েছিলেন বহুদূর। শেষ পর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়া ছেলেকে উদ্ধার করা হয়। দলের গাইয়েরাই বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে যায়।    

চান্নাপ্পা কুর্তাকোতি প্রথম গুরু। তিনি ছিলেন ইনায়েৎ খাঁর ছাত্র। আবদুল আমির খাঁ’র এক ঠুমরী পাকাপাকি ভাবে গানের পথে টেনেছিল। ‘পিয়া বিন নাহি আয়ত আয়ে চ্যায়ন’ শুনে স্থির করে ফেলেছিলেন জীবনের পথ। গানই হবে তাঁর দুনিয়া। জীবনের ঠাঁই।

গানের টানে ঘর পর্যন্ত ছেড়েছিলেন। বয়স তখন মাত্র ১১। ভাল ছাত্র ছিলেন, হঠাৎ সব ছেড়েছুড়ে সোজা উত্তর ভারত। পথে পথে গুরুর খোঁজ। যেন এক অসম্ভবের কাহিনি।  তিনবছর বিজাপুর, কলকাতা গোয়ালিয়র, লখনউ, রামপুর। বাবা গুরুরাজ যোশিও নাছোড়, ঠিক খুঁজে বের করেছিলেন ছেলেকে। ফিরতেও হয়েছিল বাড়িতে।    

১৯৩৬ সন নাগাদ গুরু পেলেন সাওয়াই গন্ধর্বকে। পরবর্তী কয়েকটা বছর রেওয়াজ ছাড়া জীবনে অন্য কোনও শব্দ নেই।

১৯ বছর বয়সে পেলেন গুরুর আজ্ঞা। ১৯৪১-এ প্রথম মঞ্চে এলেন। ৪২’এ এইচএমভি থেকে প্রথম রেকর্ড। মারাঠি আর হিন্দি ভজন। পরের বছরগুলোতে তাঁর গানের তরী বয়ে চলল তরতরিয়ে। ঠিক যেমনটা তিনি চেয়েছিলেন সেভাবেই। খেয়াল, ভজন শোনার অভ্যাস বদলে দিয়েছিলেন।

রেডিয়ো থেকে ছবির জগৎ সবখানেই। তাঁর গানের অনুষ্ঠান নিয়ে তৈরি হয়েছিল মিথও। শোনা যায় একবার অনুষ্ঠান যাতে বাতিল করতে না হয় তার জন্য, ১৬টা কাঁচালঙ্কা খেয়ে গাইতে বসেছিলেন।     

    

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...