বঙ্গের স্বর্গ পালমাজুয়া

মেঘ আর কুয়াশা ঢাকা পাকদন্ডী পথ। ধারে ধারে পাইন বন। পাখির আর পাহাড়ী ঝিঁঝির ডাক ছাড়া অন্য কোনও শব্দ নেই। একটু বেলা বাড়লে মেঘের ফাঁক থেকে রোদ এসে পড়ে ঘুমপাহাড়ের গায়ে। কুয়াশার ঘোর ভেঙে ঝিলমিলিয়ে ওঠে চারপাশ। সেই সোনালী- রূপোলীর খোয়াব পেরিয়ে এসে পড়ে এক চিলতে গ্রামটা। পালমাজুয়া। সমুদ্রপিঠ থেকে ৭২৫০ ফুট উচ্চতায়।

বাতাসের গন্ধ বলে দেয় চেনা লোক ছাড়িয়ে আপনি এসে পড়েছেন এক অচিন প্রদেশে। রাস্তার ধারে ধারে ছোট ছোট ঘর। চোখ টেনে নেয় রঙিন ফুলের জৌলুস। লাল, বেগুনি, কমলা, নীলের বাহার। নাম জানার উসখুসানি ভুলে মনে হয় শুধু তাকিয়ে থাকি, আর শিরার মধ্যে শুষে নিই চারপাশের দৃশ্যকে।

palma-bird

পালমাজুয়া এই বাংলারই এক পাহাড়ি গাঁ। কয়েকঘর মাত্র মানুষের বাস। এ আসলে পাখির সাম্রাজ্য। লাল পান্ডার এলাকা। মানুষ সেখানে অতিথিমাত্র। ঘুম স্টেশনে পেরিয়ে ধোত্রে আর শ্রীখোলার কাছে ভৌগলিক অবস্থান।  

দার্জিলিং থেকে পালমাজুয়ার দূরত্ব খুব বেশি নয়। যেতে সময় লাগে মাত্র ১ঃ৩০ মিনিটের মতো। বছরের নানা সময়ে পাখীপ্রেমী মানুষ ভিড় জমান এখানে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সেরা বার্ড স্যানচুয়ারি। দেড়শোর বেশি নানা প্রজাতির পাখি দেখা যায়। পর্যটকদের চেনা ভিড় থেকে দূরে ফটোগ্রাফারদের ড্রিম ডেস্টিনেশন। সিঙ্গালিয়া ন্যাশনাল ফরেস্ট পাশেই। রেড পান্ডার জন্য বিখ্যাত। 

palma-panda

ধোত্রে থেকে পালমাজুয়ার পথ মন ভুলিয়ে দেয়। ঠাণ্ডা বাতাসের ঝলক আর চারপাশের রোদেলা সবুজ আলাদা আরাম দেয়। শহুর মনের শিকলগুলো আপনা থেকেই আলগা হতে শুরু করে। পথ আপন করে নেয় পথিককে। কখন যেন ঝাপসা ঘরের টান।

জঙ্গল, পাহাড়, পাখি আর নিঝুম অবসর সব মিলিয়ে পালমাজুয়া। তিরতিরিয়ে বয়ে যায় ছোট্ট ঝোরা। তার শব্দ শোনা যায় দূর থেকে। গভীর রাত নামলে শান্ত। এখানে রাত নামে বেশ তাড়াতাড়ি। সূর্য পাটে গেলেই পাখিদের সঙ্গে ঘরে ফেরে মনিষ্যিরাও। নিরিলা গ্রামে জীবনও ব্যস্ততাহীন। পর্যটকদের জন্য স্থানীয় কটেজ আছে। হোমস্টে’র স্বাদ পাওয়া যায়। অনলাইনে বুক করে যেতে পারেন। পালমাজুয়ার আর এক বৈশিষ্ট্য এখানকার খাবার। স্থানীয় রান্নার ঘরোয়া স্বাদ মন ভরিয়ে দেয়।

palma-flower

পালমাজুয়া পাহাড়ে ঘেরা হলেও এখান থেকে কিন্তু সরাসরি সোনালী কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না। তার জন্য  যেতে হয় কাছেই আর এক ডেস্টিনেশনে। নাম শ্রীখোলা। লোকাল গাড়ি বুক করে ঘুরে আসতেই পারেন। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গাড়িতে মানেভঞ্জন এসে সেখান থেকেও যাওয়া যায়। মানেভঞ্জন থেকে পালমাজুয়ার দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। অনেকে সান্দাকফু বা ফালুট ট্রেক করে ফেরার পথে এখানে আসেন। রিমবিক থেকে পালমাজুয়া ১৮ কিলোমিটার।

শহরের কোলাহল থেকে যোজন দূরে নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর অবসর যদি কেউ খোঁজে তাহলে একবার ঘুরে আসতেই হবে পালমাজুয়া থেকে। বাংলার মধ্যেই এ এক অন্য স্বর্গরাজ্য।      

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...