ভারত এক বৈচিত্র্যময় দেশ এবং তার ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে আছে রহস্য। স্বাধীনতার আগে ও পরের মধ্যেই বদলেছে অনেক কিছু, সময় থেকে পরিস্থিতি সব । কিন্তু কিছু জিনিস এক্কেবারে অপরিবর্তিত রয়ে গিয়েছে, যেমন আমরা জানি ভারতের মধ্যেই বাংলাদেশ আছে । হ্যাঁ - সে আর কিছুই নয় ভারতের অন্তর্গত একটি গ্রাম । আর এবার বলি আরও এক বিচিত্র গল্প । এমনিতে ভারত -পাকিস্তানের চিরন্তন রাজনৈতিক দ্বন্দ নিয়ে গোটা বিশ্বই খানিক চিন্তিত থাকে । কিন্তু খোদ ভারতের অভ্যন্তরে সেই দ্বন্দ্ব কিন্তু চোখে পড়বে না। মানে ভারতের এমন জায়গা যেখানে আধার কার্ডে, ভোটার কার্ডের ঠিকানা দেওয়া ‘পাকিস্তান’! অথচ দেশ বলছে ভারত! ব্যাপারটা কী? বেআইনি অনুপ্রবেশ? আজ সেই সন্ধান দেব ।
শুনে অবাক লাগলেও বিষয়টা সত্যি। আধার কার্ড সত্যি, ভারতীয় তারা এটাও সত্যি। তবে মজার ব্যাপার হলো এই পাকিস্তান কোনও দেশ নয়। ভারতের ভেতরেই রয়েছে এর অস্তিত্ব। বিহারের পূর্ণিয়া থেকে ৩০ কিমি দূরের একটা ছোট্ট গ্রাম, যা শ্রীনগর ব্লকের অন্তর্গত।
কিন্তু এমন নামকরণ কেন? এর পেছনে রয়েছে দেশভাগের স্মৃতি। এখন যেখানে ‘পাকিস্তান’ গ্রাম, সেখানে একটা সময় মুসলিমরাই বসবাস করত। তখন অবশ্য গ্রামের কোনও নাম ছিল না। ’৪৭-এ দেশভাগের পর এখানকার মুসলিমরা সবাই চলে যায় পূর্ব পাকিস্তানে, অর্থাৎ এখনকার বাংলাদেশে। ফাঁকা গ্রামে এসে বসত তৈরি করে স্থানীয় আদিবাসী, গ্রামবাসীরা। তখন সেই মুসলিম প্রতিবেশীদের স্মৃতিতেই গ্রামের নাম হয়ে যায় ‘পাকিস্তান’। যেটা আজও মোছা হয় নি ।
এতদিন কোনও সমস্যা বা নাম বদলের প্রয়োজন না হলেও এখনকার প্রবল জাতীয়তাবাদের রক্তচক্ষুর সম্মুখীন হয়েছে এই পাকিস্তান। গ্রামবাসীরা বেশ কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এর জন্য। যদিও এর সমাধান সূত্র তারাই বের করেছেন। তাদের মতে, যদি নাম বদল করতেই হয় তাহলে ‘পাকিস্তান’ বদলে গ্রামের নাম ‘বিরসা নগর’ করা যেতে পারে। যদিও আজ তাদের অস্তিত্বের সংকট এড়াতেই এই নামের পরিবর্তন তাদের কাছে খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এখনও সে বদল হয়নি। তাই, আজও ভারতের বুকে বেঁচে আছে এক টুকরো ‘পাকিস্তান’। তবে আর কতদিন তাকে রাখা যাবে সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।