বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক নয় তো?

বুকের বামপাশে হালকা ব্যথা অনুভূত হলেই বুকটা কেমন যেন দুরদুর করে ওঠে। তা নয় কি? কিন্তু বুকে ব্যথা করলেই তা শুধু হার্ট রিলেটেডই হয়? চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক বুকের ব্যথার নানাপ্রকার সম্পর্কে।অনেকসময় সামান্য গ্যাসের ব্যথাও আমাদের বেশ কষ্টকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করে ফেলতে পারে। অনেকসময় আবার বেশ কঠিন রোগও সঠিকভাবে রোগলক্ষণ প্রকাশ না করার ফলে আমরা সেই মুহূর্তে বিপদের গভীরতা বুঝতে ব্যর্থ হয়ে থাকি। কোন ধরণের বুকের ব্যথা ক্ষতিকর এবং কোন ধরণের ব্যথা আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ হলেও ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলতে পারে চলুন সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক..............

 

 প্রথমেই আসা যাক হার্ট অ্যাটাকের কথায়।হার্ট অ্যাটাককে সকলে ভয় পেলেও এই কন্ডিশন নিয়ে সচেতনতা আজও সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি। হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো, বুকের মাঝে ব্যথা এবং একধরণের চাপের অনুভূতি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সবধরণের হার্ট অ্যাটাকের সময় আবার ব্যথাও অনুভূত হয় না। সামান্য কিছু অস্বস্তি অনুভূত হয় কিন্তু ভিতরে ভিতরে অনেক বড় ক্ষতি ততক্ষনে হয়ে যায়। তাই চিকিৎসকেরা  জানাচ্ছেন, বুকের ঠিক মাঝখানে ব্যথা অনুভূত হলে দেরি না করে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ

 

অনেকসময় বুকের বামপাশে ব্যথা অনুভূত হয় শুধুমাত্র গ্যাসের কারণে। বডির যেকোনো জায়গাতেই গ্যাস লক হয়ে যেতে পারে। গ্যাস হালকা হওয়ার কারণে সবসময় উপরের দিকে উঠে যেতে চায়। কিন্তু শরীরের নানা ভাঁজের কারণে এবং নানা অঙ্গপ্রতঙ্গের উপস্থিতির কারণে সেই গ্যাস সবসময় পাস করে যেতে পারে না। বাধাপ্রাপ্ত হয় বিভিন্ন জায়গায়। সেইসময় সেই জায়গায় চাপ ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অনেকেই এই ব্যথাকে হার্ট অ্যাটাকের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গ্যাসের জন্য হওয়া বুকের বামপাশে ব্যথার আবার নানা প্রকারভেদ  রয়েছে। যেমন, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজে পাকস্থলীতে তৈরী হওয়া অ্যাসিড উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। ফলে এক্ষেত্রে বুকে ব্যথার পাশাপাশি গলা ও বুকে একধরণের জ্বালার অনুভূতিও সৃষ্টি হতে পারে। পেপটিক আলসারের ক্ষেত্রে আবার পাকস্থলীর লাইনিং-এ একধরণের ঘা-এর সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই রোগের ক্ষেত্রে খাবার বা জল খাওয়ার পরেই আচমকা ব্যথা শুরু হয়

 

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রাণীদের হৃদপিণ্ডের চারপাশে একধরণের স্যাক থাকে যা হৃদপিন্ডকে বাইরের কঠিন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে। এই স্যাকটিকে পেরিকার্ডিয়াম বলা হয়। এই পেরিকার্ডিয়ামে ইনফ্লেমেশন হলে তাকে পেরিকার্ডিটিস বলা হয়ে থাকে। এই রোগেও সাধারণত বুকের বামদিকে ব্যথা হয়ে থাকে কিন্তু এর সাথে সাথে যেসব রোগলক্ষণ প্রকাশ পায় তা হলো ব্যথা ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং শেষপর্যন্ত কাঁধে ও ঘাড়ে গিয়ে শেষ হয়। এইধরণের ব্যথা খুবই স্টেডি হয়ে থাকে এবং পেনকিলার খেলেও এইধরণের ব্যথার নিরাময় হয় না।

 

ফসফুসে জল জমার কারণেও বুকের বামপাশে ব্যথা হতে পারে। এই কন্ডিশনকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় প্লিউরিসি। এই রোগে ফুসফুসের লাইনিং-এ ইনফ্লেমেশন অর্থাৎ যন্ত্রণার অনুভূতি হতে থাকে যা নিঃশ্বাস নেওয়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকেহাঁচি বা কাশির সাথে এই ব্যথা প্রখর হতে শুরু করে। এইধরণের রোগের মূল কারণ হতে পারে ভাইরাল কিংবা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, পালমোনারি এম্বোলিজম প্রভৃতি।

হার্ট অ্যাটাক ছাড়াও নানাকারণে বুকের বামদিকে ব্যথা হতে পারে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বুকের ব্যথাকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। সেই ব্যথা সামান্য গ্যাস লক হয়ে যাওয়ার কারণেই হোক কিংবা হার্ট রিলেটেড কিছু হোক, চিকিৎসকের কাছে অবশ্যই যাবেন। কিছু ক্ষেত্রে আপৎকালীন অবস্থা আমরা বুঝতেই পারি না সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে গেলে হয়তো সেই রোগনির্ণয় কিছুটা সহজে হয়ে যায়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...