নিভে আসছে চোখের জ্যোতি| সহৃদয় কিছু মানুষের সাহায্য নিয়ে চলছে চোখের চিকিত্সা| অভাব, শারীরিক কষ্ট, বা অক্ষমতা কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি মধ্যবয়স্ক এই মানুষটিকে| ইচ্ছের চারাগাছকে সযত্নে লালন করলে তা ঠিক একসময় মহীরুহের আকার নেয়| সেটাই করে দেখিয়েছেন করিমুল হক|
চা বাগান আর জঙ্গলে ঘেরা ধলাবাড়ি। সেই জলপাইগুড়ি জেলার অখ্যাত ধলাবাড়ির ভূমিপুত্র করিমুল| সবচেয়ে কাছের হাসপাতালে যেতে গেলে পেরোতে হয় ৪৩ কিলোমিটার পথ। তাও আবার বর্ষার সে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়| চিকিৎসার অভাবে রোগীমৃত্যু সেখানে স্বাভাবিক দৈনন্দিন ঘটনা| বেকারত্ব দৈনন্দিন অভাব, শিক্ষা, স্বাস্থ্যর মত প্রাথমিক অধিকারগুলো এখানে অবহেলিত| এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে একা লড়ে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছেন ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’ করিমুল হক | অ্যাম্বুল্যান্স না থাকার কারণে নিজের মাকে চোখের সামনে হারিয়েছিলেন| সেই মায়ের মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়েই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, অ্যাম্বুল্যান্সের না থাকার কারনে ধুলাবাড়ির আর কারও প্রাণ যেতে দেবেন না তিনি। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে তৈরি করেছিলেন গাড়ির অ্যাম্বুল্যান্স-এর বদলে বাইক অ্যাম্বুল্যান্স। নিজের জমানো সব টাকা দিয়ে কেনা বাইকেই তিনি তুলে নিয়েছেন বহু দুঃস্থ রোগীকে।পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে| বাঁচিয়েছেন বহু প্রাণ|এলাকার মানুষের কাছে তিনি ত্রাতা|
শুধু মাত্র বাইক অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাতে থেমে থাকতে চাইছেন না পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত করিমূল| বাড়িতে এখনও আছে দুটো বাইক অ্যাম্বুল্যান্স| চোখের সমস্যাকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না তিনি| এবার লক্ষ্য হাসপাতাল| নিজের ঘর পাশের জমিতেই গড়ে তুলছেন গরিবের হাসপাতাল। নাম দিয়েছেন 'মানব সেবা সদন'। ইতিমধ্যেই দোতলা কাঠামো গড়ে উঠেছে সেই হাসপাতাল বাড়ির। কিন্তু এটুকু করতেই নিজের সহায় সম্বল সব শেষ| তাই বাধ্য হয়ে সকলের কাছে সাহায্য চাইছেন তিনি|
করিমুল বলছেন, একটা হাসপাতাল গড়ে তুলতে যতটা প্রয়োজন অর্থের, তা এখনও জোগাড় করে উঠতে পারছেন না | তাই এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের ওপর ভরসা করছেন তিনি| যদি সবাই নিজের সাধ্যমতো একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে এই হাসপাতালেই হয়ত প্রাণ বাঁচবে ধলাবাড়ি ও আশপাশের মানুষের বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি|