পুরুলিয়ার মেয়ে কিরণ বাউরি। কিরণ নিজের এবং পাশাপাশি গ্রামের মেয়েদের পিরিয়ডসের বিশেষ দিনগুলোতে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার সংক্রান্ত ব্যবপারে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজ করাটা তার একদম নিজের মত করেই। তার এই প্রয়াস ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে হুটমুড়া, জয়নগর, কড়চা, ভাংড়া ,সিদপুর, ভবানীপুর ,গ্রামের কিশোরীদের কাছে। তাদের কাছে কিরণ এখন প্রিয় দিদির মতোই আপন। পুরুলিয়া থানার হুটমুড়া হরিমতি উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়ন করছে কিরণ বাউরি। কিরণ জানায় স্কুলেই শিক্ষিকাদের কাছে সে প্রথম জানতে পারে স্যানিটারি প্যাডের কথা। তার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে। গ্রামে সাধারণত এর কোন প্রচলন নেই। মাসের বিশেষ সময়গুলোতে শুধুমাত্রই ক'এক টুকরো কাপড়ের ওপরই নির্ভর করে অনেকে। এই কাপড় থেকে হতে পারে নানা শারীরিক সমস্যা এবং ব্যাধি। তাই কিরণ ঠিক করে গ্রামের মেয়েদের এ বিষয়ে সচেতন করবে সে। কিন্তু শুধু সচেতন করলেই তো কাজটি শেষ হয়ে যায় না। তাই বাকি দায়িত্বটুকুও নিজের কাঁধে সাধ্যমত তুলে নেয় সে। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে স্যানিটারি প্যাড পৌঁছে দেয় সে সকলের কাছে। বিশেষত দরিদ্র পরিবারগুলোতে যেখানে অর্থের অভাবে স্যানিটারি প্যাড কেনবার ক্ষমতা থাকেনা কিশোরীদের, তাদের জন্য নিজেই স্যানিটারি প্যাড কিনে পৌঁছে দেয় দ্বাদশ শ্রেণীর বাউরি। তার উদ্যোগ ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে পিরুলিয়ার বিদায়ী জেলা প্রশাসক অলকেশ প্রসাদ রায়ের কাছে।
মেয়েদের স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কিত একটি প্রকল্প 'উড়ান'। অলকেশ জানান, এই প্রকল্পের পক্ষ থেকে স্কুলের ছাত্রীদের স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহার সম্পর্কে বিদ্যালয় গুলোতে ক্যাম্পেইন করা হয়। 'উড়ান'- ক্যাম্পেইন এর প্রথম যাত্রা শুরু হয় কিরণের বিদ্যালয় হুটমুড়ার হরিমতি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই ক্যাম্পেইনে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রামের মেয়েরা যেন স্বল্প মূল্যেই স্যানিটারি প্যাড সংগ্রহ করতে পারে সে বিষয়ে গ্রামের মহিলাদের দিয়ে তৈরী করানো হচ্ছে স্যানিটারি প্যাড। বেশ কিছু মেয়েদের স্কুলে বসানো হয়েছে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন। এই ক্যাম্পেইন থেকেই কিরণ জানতে পেরেছিল স্যানিটারি প্যাডের কথা। তারপর কিরণের ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ। এখন 'উড়ান'- এর মুখ হিসেবে তাকে পেয়ে গর্বিত সকলেই।