"আই রাদার প্রাইড মাইসেল্ফ অন মাই প্যাকিং"। "থ্রি মেন ইন আ বোট" উপন্যাসের লেখক জেরম. কে. জেরম-এর মত এরকম স্বগর্বে ঘোষণা করার মত সাহসী মানুষ যে কম সেকথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাও আবার ব্যাগ গোছানোর মতো একটা প্রত্যাশাহীন কাজ। সোজা কথায় থ্যাংকলেস জব। কিন্তু এ বিষয়ে একটু অনুসন্ধিত্সু হলেই অনেক রংবেরঙের মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়। বেড়াতে যাওয়ার প্রয়োজনে ব্যাগ গোছানো বিষয়টা কিন্তু প্রতিদিনের ঘর গোছানোর মতো বোরিং নয়। বেশ ইন্টারেস্টিং। বেওয়ারিশ ভাবে এদিক ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা রোজকার জিনিসপত্র গোছানো নিছকই "কাল হরণের গ্লানি"।কিন্তু বেড়াতে যাওয়ার কথা ভেবে গোছানো বিষয়টাতে কোথাও যেন অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ থাকে। এই যেমন কোন পছন্দের পোশাক হয়তো আলমারি বা ব্যাগবন্দী হয়ে পড়েই আছে দীর্ঘদিন, কখনো আলমারি খুলে চোখে পড়লেও নজরে আসেনি মালিক বা মালকিনের। বেড়াতে যাওয়া মানেই সেইসব অনেক দিন শরীরের গন্ধ না পাওয়া পোশাকদের মুক্তি। ব্যাগ গোছানো কিন্তু মোটেই সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে বেড়াতে যাওয়ার মত এরকম উদ্দেশ্য নিয়ে গোছানো। সেখানে প্রয়োজন পারদর্শিতার। সাধারনত ভ্রমণ সুলভ জামাকাপড়ের কদর বেশি হয় এক্ষেত্রে। স্পষ্ট ভাষায় ছবিতে সুন্দর হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় জামাকাপড়ের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী হয় এই সময়। সেই ধরনের জামাকাপড় বাড়ির কোন আলমারিতে, কোন তাকে পড়ে রয়েছে আগে সেই স্মৃতির রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। তারপর আসে বিবেচনার পালা।কি ধরনের জামা কাপড় বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তু লাগবে তা নিয়ে রীতিমত গবেষণা করেন অনেকেই। শীতপ্রধান দেশে বেড়াতে গেলে এক ধরনের তালিকা, গ্রীষ্মপ্রধান স্থানএর ক্ষেত্রে প্রয়োজন অন্য। পাহাড়,জঙ্গল বা সমুদ্র অর্থাৎ স্থানভেদেও তালিকা পাল্টে যায়। প্রত্যেকটি জিনিস ব্যাগের কোন প্রান্তে রাখা হবে সে বিষয়েও নিখুঁত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। অনেক বাড়িতেই কে ব্যাগ গোছাবে সে নিয়ে যুদ্ধ বেঁধে যায়। এই কাজে দক্ষ ব্যক্তিটির হয়তো সময়ের অভাব, আর যে মোটামুটি চলনসই কাজ জানে সে অপরজনের নিখুঁত কাজের অপেক্ষায় গোছানো শুরু করতে পারেনা। ব্যাগ গোছানো মনের মত না হলে দক্ষযজ্ঞ বেঁধে যায় কোন কোন পরিবারে। কিছু খুঁতখুঁতে মানুষের আবার নিজের জিনিসপত্র নিজে হাতে ব্যাগে না রাখলে শান্তি নেই। ফলে অন্য কেউ সাহায্য করতে এলেও সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। কেউ আবার ঘোরার পরিকল্পনা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ট্রলি বা ব্যাগটি হাতের কাছে এনে গোছাতে বসে পড়েন। ফাইনালি যাওয়ার দিন যাতে বারবার রিভিশন এর সুযোগ পাওয়া যায়। একেবারে বিপরীত চিন্তাধর্মী মানুষও রয়েছেন। মঞ্চে বাজিমাত করার পন্থাতে বিশ্বাসী তাঁরা। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মোটামুটিভাবে নিয়ে নিতে পারলেই হলো। এ বিষয়ে প্যাশনেট নন। অনেকে আবার এতোটাই প্যাশনেট যে, ব্যাগ গোছানো নিয়ে রীতিমত একটি গবেষণাপত্র নামিয়ে দিতে পারেন। রীতিমতো কাগুজে তালিকা তৈরি করে তাতে দাগ দিয়ে বাছাবাছি করেন জিনিসপত্র, যাতে কোনোভাবেই কিছু মিস না হয়।আবার সুন্দর করে পরিপাটিভাবে গোছানো জিনিসপত্র যখন ভ্রমণ শেষে বাড়ির আরো লোকজনের অগোছালো হাতের ছোঁয়ায় আর বাস-ট্রেনের গুঁতোগুঁতিতে অবিন্যস্ত হয়ে ফিরে আসে সেদিকে তাকিয়ে তাদের চোখ অদৃশ্য অশ্রুতে ভরে ওঠে। অনেকে আবার বিশৃঙ্খলা সহযোগে ব্যাগ গোছানোতেই শান্তি পান। আসলে সব শৃঙ্খলাপরায়ণতায় কোথাও যেন শৃঙ্খলের পরাধীনতার স্বাদ পান তাঁরা। তাই বিশৃঙ্খলা মানে স্বাধীনতা এঁদের কাছে। এ বিষয়ে সবচেয়ে ভাগ্যবান একা বেড়াতে যাওয়া মানুষেরা। ব্যাগ গোছানো মানে এঁদের কাছে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের গতানুগতিক সঙ্গ। সেই বিষয় নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করেন না। তবে যেমন ভাবেই কাজ সম্পন্ন করা হোক না কেন, ব্যাগ গোছানো যে বেড়ানোর আনন্দের সূত্রপাত ঘটায় তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।