মানুষের শরীরের প্রধান উপকরণের মধ্যে অন্যতম হল অস্থি বা হাড়। সেই অস্থি অস্টিওপোরোসিস নামক এক রোগের কারণে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হতে থাকে দুর্বল ও ভঙ্গুর। আজ আমরা জেনে নেবো কি এই অস্টিওপোরোসিস, কি তার কারণ এবং কিভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়। অস্টিওপোরোসিস হল এমন এক রোগ যেখানে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। হাড় তৈরির গতিও ধীরে ধীরে শ্লথ হতে থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি হওয়ার ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে কারণ এই ইস্ট্রোজেন হরমোনই অস্টিওপোরোসিস রোধ করতে সহায়তা করে। হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলে সামান্য চোট থেকেই হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অস্টিওপোরোসিস কথার অর্থ হলো "পোরাস বোন" অর্থাৎ ছিদ্রযুক্ত হাড়। সাধারণত মানুষের শরীরে হাড়ের ঘনত্ব সবথেকে বেশি হয় ২০ বছরের কোঠায়। তারপর ৩৫ বছর পেরোলেই তা ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। এখনো পর্যন্ত এই রোগের চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত আছে কিছু ওষুধ যা এই অস্টিওপোরোসিসের বেড়ে চলাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা হরমোন থেরাপিও ব্যবহার করে থাকেন| কিন্তু ২০১৬ সালে একটি বিশেষ গবেষণার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এই রোগের চিকিৎসার এক বিশেষ ওষুধ যা “স্টেম সেল থেরাপি” নামে পরিচিত। ইঁদুরের উপর করা এই গবেষণাতে দেখা গেছে, বিশেষ এক প্রকারের স্টেম সেল ইঁদুরের শরীরে ইঞ্জেক্ট করাতে শরীরে এই রোগের প্রকোপ কমছে। ভবিষ্যতে এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি মানুষের উপর প্রয়োগ করার কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা| তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিজের মত চলুক। তার আগে আমাদের চেষ্টা করা উচিত কিভাবে ওষুধ না খেয়ে সুস্হ্য থাকা যায়। তার জন্য করতে হয় লাইফস্টাইলে কিছু পরিবর্তন। হাড়ের মূল উপাদান হল ক্যালসিয়াম তাই খাবারের মধ্যে ক্যালসিয়ামের পরিমান সঠিক থাকলে মুক্তি মিলতে পারে এই রোগের প্রকোপ থেকে। বেশি পরিমানে মিল্ক প্রোডাক্ট যথা ঘি, মাখন, চিজ প্রভৃতি রাখা উচিত খাবারের তালিকায়। সবুজ শাকসবজিতে থাকে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও ক্যালসিয়াম তাই অবশ্যই উচিত প্রচুর শাকসবজি খাওয়া। ভিটামিন ডি এই ক্ষেত্রে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে আর এই ভিটামিনটি খাবার থেকে প্রতক্ষ্য ভাবে পাওয়া যায় না। এই ভিটামিনটি মানুষেরই শরীরে তৈরী হয় শরীরে সূর্যালোক লাগার ফলে। তাই দিনের বেলা হালকা রোদে কিছুক্ষন থাকার চেষ্টা করুন। এবার আসা যাক কিছু সাবধানবাণীতে। প্রথমেই উচিত ধূমপান বন্ধ করা। মহিলাদের শরীরে ধূমপানের ফলে ইস্ট্রোজেন হরমোনের লেভেল কম হতে থাকে যা ধীরে ধীরে অস্টিওপোরোসিসের রূপ ধারণ করে। খাবারে অতিরিক্ত পরিমান লবন নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত কারণ লবনে উপস্থিত সোডিয়াম ক্লোরাইড হাড়ের জন্য ক্ষতিকারক। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত পরিমান চা ও কফি হাড়ের ক্ষয়ের পরিমান বৃদ্ধি করে। অতিরিক্ত পরিমান প্রাণীজ প্রোটিন অর্থাৎ মাংস খাওয়াও ক্ষতিকারক হতে পারে হাড়ের জন্য। কারণ প্রাণীজ প্রোটিন থেকে অতিরিক্ত পরিমান অ্যাসিড নিঃসৃত হয়ে তা শরীরে মেশে| শরীরে উপস্থিত ক্যালসিয়ামের কাজ হল সেই অ্যাসিডের আধিক্য কমানো। তাই এই কাজটি করতে গিয়ে ক্যালসিয়াম তার নিজের কাজ করা থেকে বিরত থাকে, ফলে হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। তাই পুষ্টিকর খাবার খান, সুস্থ্য থাকুন এবং অস্টিওপোরোসিস কে বলুন বাই বাই|