অশরীরী সাবধান

শনশনে হাওয়া। চারপাশ এমন ঘোর যে কোনই কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হিমের রাতের রাস্তা ধোঁয়ায় ঢাকা। ধোঁয়া কোথা থেকে এলো কেউ জানতে চায়না কোনওদিন। কেউ হয়ত তাত পোহাতে আগুন জ্বেলেছে। শুনশান রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে পাতা খসার আওয়াজ কানে আসে। ঝরে যাওয়া শুকনো পাতার ওপর দিয়ে কেউ যেন সরসরিয়ে হাঁটছে। ছমছমিয়ে ওঠে গা। পা ভারী হয়ে আসে। ইচ্ছে করলেও পা চালিয়ে হাঁটা যায় না। বাতাস ক্রমশ বরফের মতো ঠাণ্ডা। ঘন অন্ধকার চিরে উঠে আসছে শব্দটা। তাকে চোখে দেখা যায় না। শুধু কানে শোনা যায় ডাক...কেঁদেই চলেছে একটানা...এডগারের পোষা মিশমিশে বিড়ালটা...

pumpkin

কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কে যেন বলে যায়্‌... ‘ও কেন এমন করে ডাকে...’

আচমকা মনে পড়ে যায় তারিখটা। আজ যে ৩১! অক্টোবর! 

প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ দিনটিতে ইউরোপের দেশগুলিতে পালিত হয় "হ্যালোইন উৎসব"। মূলত ইউরোপীয় উৎসব হলেও হ্যালোইন ইভ এখন বিশ্বজনীন। দেশ সীমা পেরিয়ে আমাদের কলকাতাতেও এসে পড়েছে।

৩১ অক্টোবর বলা হয় মৃতদের পুনরুত্থানের দিন। আজকের দিনে মৃত আর জীবিতের মধ্যে দূরত্ব থাকে না।

অভিধান বলছে, প্রকৃতপক্ষে, Hallowe'en শব্দটি এসেছে "All Hallows Eve" থেকে। পরের দিনটি ১লা নভেম্বর- All Saints' Day বা All Hallows Day র আগের দিনটিকে চিহ্নিত করে।

হলোইন-এর উৎপত্তি প্রাচীন কেল্টিক উৎসব "সামহেন" থেকে। যা ছিল তাদের ফসল কাটার উৎসব। অধুনা আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর ফ্রান্সে প্রায় দু'হাজার বছর আগে বাস করত কেল্টিক সম্প্রদায়।

দিনটি গ্রীষ্মের ফসল কাটা, অন্ধকার এবং ঠান্ডা শীতের আগমন বোঝায়। মরসুমের শেষ হিসেবে হ্যালোউইন পালিত হত।

এছাড়াও, এটি শীতের মাসগুলির সূচনাও চিহ্নিত করে। কেল্টস সম্প্রদায় বিশ্বাস করতেন যে নতুন বছরের আগের রাতে জীবিত ও মৃতের জগতের মধ্যে দূরত্ব থাকে না। অর্থাৎ জীবিতের সঙ্গে পরলোকগত ব্যক্তিরা মিলিত হন। ৩১ অক্টোবর রাতে তারা সামহেন পরব বা উৎসব রীতি অনুযায়ী প্রতিপালন করেন। কেল্টিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন ১ নভেম্বর।

হ্যালোইন উৎসব এখন আর কোনও ভাবেই শুধু ফসল কাটার উৎসবে সীমাবদ্ধ নেই। হয়ে উঠেছে গ্লোবাল ট্রেন্ড। হ্যালোইন উপলক্ষে আয়োজিত হয় ‘হ্যালোইন পার্টি’। ভূতের সাজে সেজে সেই পার্টিতে যোগ দেয় মানুষ। তারকারাও এদিন ভূত। তবে এই উৎসবের মূল আকর্ষণ কিন্তু সেই কচিকাঁচারাই। ভয়ঙ্কর সব মুখোশ, আর পোশাকে ভূতের সাজে সেজে গৃহস্থের দরজায় দরজায় ট্রিক-অর-ট্রিকের জন্য হাজির হয় তারা।

p2

হ্যালোইনের সিগনেচার কুমড়ো। টকটকে কমলা রঙের পাকা মিষ্টি কুমড়ো ছাড়া হ্যালোইন ভাবাই যায় না!

আমরা কুমড়োকে সবজি হিসেবে ভাবলেও পাশ্চাত্য দেশগুলিতে এটি ফল। কুমড়োকে অশুভকে প্রতিরোধ করার চিহ্ন হিসেবে ধরা হয়।

এ নিয়ে একটি গল্পও প্রচলিত আছে। গল্পের জন্মভূমি আয়ারল্যান্ড।

বহু বছর আগে আয়ারল্যান্ডে স্টিঞ্জি জ্যাক নামে এক মাতাল বাস করত। সে একদিন নেশার ঘোরে শয়তানকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানিয়ে আসে।  

পরদিন ঘুম ভাঙলে স্টিঞ্জির খেয়াল হয় আগের রাতে কী ভয়ঙ্কর কান্ডটাই না সে করে ফেলেছে! বাড়িতে শয়তানকে দাওয়াত দিয়ে আসার পরিনাম কী হতে পারে ভেবে, ভয়ে তার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে সে বিপদ এড়াতে পারে না। শয়তানের কবলে পড়েই তাকে প্রাণ খোয়াতে হয়।

এদিকে স্বর্গের দুয়ারে গেলেও তাকে আটকে দেয় রক্ষী। মদ্যপান আর সারাজীবন কিপটেমির জন্য অন্যকে কষ্ট দিয়ে যে পাপ সে করেছে তারই ফল! এদিকে শয়তানও তাকে নরকে জায়গা দেয় না।

এই অবস্থায় স্টিঞ্জি জ্যাকের আত্মাকে একটি শালগমের মধ্যে পুরে তাকে ফের পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।    

nun

শালগমের আকারে সে বছরের পর বছর পৃথিবীর বুকে অশুভ আত্মা আর অশরীরীদের  প্রতিহত করে আসছে বলে বিশ্বাস। শালগমেরই বদলে যাওয়া রূপ নাকি মিষ্টিকুমড়ো। ‘অল হ্যালোস ডে’ বা ‘হ্যালোইন’ উৎসবে ভূত তাড়াতে বিশেষ আকৃতিতে কুমড়াকে নকশা করে রেখে দেয়া হয় বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে। ওই বিশেষ নকশার কুমড়ার ভেতরে আলো জ্বালালে তা আবার ‘স্টিঞ্জি জ্যাক ল্যান্টার্ন’ নামেও পরিচিত।

হ্যালোইন ইভ শুরুর এক মাস আগে থেকেই কুমড়ো পাকতে শুরু করলে বিভিন্ন ফার্মে শুরু হয় প্রদর্শনী। সেপ্টেম্বর মাস থেকেই পশ্চিমের খামারগুলোয় শুরু হয় কুমড়ো প্রদর্শনী। সঙ্গে চলে ক্ষেত থেকে কুমড়ো তোলার প্রতিযোগিতা। কে কত বড় ফলাতে পেরেছে, কার্ভিং বা নকশা কাটা, এটি দিয়ে তৈরি খাবারের প্রতিযোগিতাও। কুমড়ো নিয়ে এইসব মজার গেমস ‘পাম্পকিন প্যাচ’ নামে পরিচিত।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...