কালী কথা: মহানাদ কালী বাড়ি

হুগলির মহানাদ দক্ষিণ পাড়ায় রয়েছে এক সুপ্রাচীন কালী মন্দির। বয়সে দেবী কালিকার এই মন্দির প্রায় দ্বিশতবর্ষের গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র নিয়োগী ১৮৩০ সালে মহানাদ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। অর্থাৎ মন্দিরের বয়স ১৯৪ বছর। নবরত্ন স্থাপত্যশৈলীতে মন্দিরটি নির্মিত। মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৮৪।

জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র নিয়োগী ছিলেন তদানিন্তন বাংলার বিত্তশালী জমিদার। কাঠ ও চিনির ব্যবসা ছিল নিয়োগীদের। নিজেদের ভদ্রাসনে ধুমধাম করে দুর্গা, লক্ষ্মী ও জগদ্ধাত্রী পুজো করতেন কৃষ্ণচন্দ্র। কিন্তু পুজো শেষ হতেই প্রতিমার নিরঞ্জন হয়ে যেত। নিত্য পুজো বা প্রতিমা দর্শনের কোনও উপায় ছিল না। সেই ভাবনা থেকেই জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির গড়ার কথা ভাবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন দক্ষিণা কালীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করবেন। যেই ভাবা, সেই কাজ। শোনা যায়, দুর্গা, লক্ষ্মী ও জগদ্ধাত্রী পুজো চালাকালীন জমিদার মা কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন।

জঙ্গলাকীর্ণ মহানাদ দক্ষিণ পাড়ার দু'বিঘা জমি সাফ করে শুরু হল মন্দির তৈরির কাজ। ১৮২২ সালে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়। টানা আট বছর ধরে চলে মন্দির তৈরির কাজ। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ১৮৩০ সালের মাঘ মাসে রটন্তি কালী পুজোর সময় মন্দিরে দেবী কালীর প্রতিষ্ঠিত করা হয় হয়। তারপর থেকেই মায়ের পুজো চলে আসছে।

সারা বছর মায়ের নিত্য পুজো হয়। শনি এবং মঙ্গলবার ও বিশেষ তিথিতে মায়ের বিশেষ পুজো হয়। রীতি মেনে প্রতি অমাবস্যায় আজও বলিদান হয়। ছাগ বলি দেওয়া হয়। মন্দিরের উপরে এবং কালীমূর্তির চারপাশে শিবলিঙ্গ রয়েছে। শিবলিঙ্গের পুজোর পরই মায়ের পুজো শুরু হয়। বাংলার নানান প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমান মন্দিরে।

বলা হয়, মহানাদ কালীবাড়িতে মানত করলে তা পূরণ হয়। জমিদার কৃষ্ণচন্দ্রের বংশের পুরুষরা বর্তমানে মন্দিরের সেবাইত। ভক্তদের বিশ্বাস, মা কালী তাঁদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন। মন্দিরে নিত্যপুজো হয় ব্রহ্মময়ীর। তবে তিনি মহানাদ কালী নামেই পরিচিতা।

মাঘ মাসে দেবী প্রতিষ্ঠিতা হয়েছিলেন। তাই মাঘ মাসে বিশেষ উৎসব হয়। ব্রহ্মময়ীর নামে ৯০ বিঘা জমি রয়েছে। পুজোর ব্যয়ভার সেখান থেকেই বহন করা হয়।

শোনা যায়, রানি রাসমণি ১৮৪৭ সালে এই মন্দির দর্শনে এসেছিলেন। বৈশাখ মাসের অমাবস্যার রাতে দেবী ব্রহ্মময়ী রূপে পূজিতা হন। পাশেই রয়েছে একটি পুকুর। জনশ্রুতি রয়েছে, তন্ত্র মতে যাঁরা ওই বিশেষ তিথির রাতে মায়ের সামনে তন্ত্র সাধনা করেন, তাঁরা যোগ বলে ওই দিন পুকুরে মায়ের আবির্ভাব লক্ষ্য করেন। মহানাদে রয়েছে জটেশ্বর শিব মন্দির। আনুমানিক আটশো বছর আগে তৈরি হয়েছিল এই মন্দির। নাথ সম্প্রদায়ের সাধকদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র এই মন্দিরটি।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...