রাজস্থানের অখ্যাত গ্রাম মানপুরা | সেখান থেকে রাইসিনা হিলসের আলোঝলমল পদ্মশ্রী পুরস্কারের মঞ্চ| এই উত্তরনের পথটা পেরোতে ঠিক কতটা সময় লাগে? মাত্র 16 টা বছর| হুকুমচাঁদ পাতিদারের ঠিক এতটা সময়ই লেগেছিল | আর পাঁচটা চাষী পরিবারের সন্তানদের মত জন্মের পরই ঠিক হয়ে গিয়েছিল যে সারাবছর চাষ করবেন | সেই ভাগ্যলিখনকে মেনেও নিয়েছিলেন হুকুমচাঁদ| কিন্তু আর পাঁচটা চাষীর মত সারাবছর প্রাণপাত করে ফসল ফলিয়ে লাভের মুখ না দেখা, এই বাঁধাধরা গতে নিজের জীবনকে বেঁধে রাখতে চাননি | পরিবারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন পদ্ধতিতে চাষ করে পাল্টে দিয়েছেন গোটা গ্রামের কৃষিব্যবস্থার বেহাল দশা | নতুন পদ্ধতিতে জৈব সার ব্যবহার করেও যে বিপুল পরিমানে লাভ করা যায় তা হাতে কলমে করে দেখিয়েছেন তিনি | তাঁর এই প্রচেষ্টা তাঁকে এনে দিয়েছে জাতীয় পুরস্কার| ২০১৮ সালে অর্গানিক ফার্মিংয়ের জন্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পদ্মশ্রী পেয়েছেন হুকুম চাঁদ |
প্রথামত ছোটবেলা থেকে বাড়ির বড়দের হাত ধরে ক্ষেতের কাজ শিখে নিতে হয়েছিল তাঁকে| পূর্বসূরিদের রীতি মেনেই রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষআবাদ করতে হত | ফসলের উত্পাদন বাড়ানো হোক বা কীটপতঙ্গের আক্রমন থেকে ফসল রক্ষা সবেতেই যথেচ্ছ রাসায়নিক সার প্রয়োগের পদ্ধতি ভালো লাগত না হুকুমের | কিন্তু মানপুরায় তখন এটাই অলিখিত নিয়ম| তাই যখন প্রথম জৈব সার দিয়ে ফসল ফলানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরাই বেঁকে বসেন | জেদে অনড় হুকুমকে পরীক্ষামূলক ভাবে মাত্র এক একর জমিতে জৈব সার দিয়ে চাষ করার অনুমতি দেয় তার পরিবার |
এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি হুকুমচাঁদকে | গোবর, পচা পাতা, খড়, কেঁচো, সবজির খোসা মিশিয়ে তৈরী করেন জৈব সার | এক একর জমির অর্ধেক জমিতে চাষ করেন রসুন, মেথি ধনে| প্রথম ফসলের মান ও ফলনের পরিমান দেখে আশ্বস্ত হন পরিবারের বাকি সদস্যরা | ২০০৪ সালে এবার পুরো পরিবারের ৪০ একর জমি নিয়ে অর্গানিক ফার্মিং এ নতুন দিশা দেখাতে শুরু করেন হুকুমচাঁদ | প্রথম বছরেই ফসল বেচে লক্ষ্মীলাভ হয় ২০ লক্ষ টাকা | রাজস্থানের স্টেট অর্গানিক সার্টিফিকেশন এজেন্সি তার ফসলকে মান্যতা দেয় | এই সার্টিফিকেট দেখিয়েই ভারতের অন্যান্য রাজ্য তথা বিদেশে ফসল পাঠানোর অনুমতি পেয়েছেন| প্রতি বছর তার জমিতে উত্পন্ন হওয়া ২ মেট্রিক টন রসুন সুইজারল্যান্ড-এ রফতানি হয়| ৫০ টন মেথি যায় জার্মানিতে ও ১০০ টন ধনে যায় জাপানে |